নিপীড়ন আর শোষণের গল্প
এম এ লিংকন মেহেরপুর প্রতিনিধি Channel 4TV : মেহেরপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে নির্মম সেই আমঝুপি নীলকুঠি চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর সড়কের পার্শ্বে ঐতিহ্যবাহী স্থান আমঝুপি নীলকুঠি। ৭২ একর আয়তনের মধ্যে প্রায় ৪ একর জায়গা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।এর মধ্যে একটি একতলা বাড়ি যে বাড়ির ছত্রে ছত্রে লুকিয়ে আছে নিপীড়ন আর শোষণের গল্প। নবাব আলীব উদ্দিন খানের এই বাগান বাড়িতে বসেই মহাপ্রতাপশালী ইংরেজরা নীল চাষ নিয়ন্ত্রণ করতো।
ভারত বর্ষকে ইংরেজদের উপনিবেশ বানানোর প্রথম পরিকল্পনাকারী ক্লাইভ লয়েড ও মীরজাফরের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের শেষ বৈঠকটিও হয় এই ভবনে। যার ফলাফল বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতন। শেষতক এই আমঝুপি নীলকুঠি হয়ে ওঠে রক্তশোষণের আঁতুরঘর। নীলচাষের মাধ্যমে বাঙালির শোষণ, বঞ্চনা আর অত্যাচারের ঐতিহাসিক ধারাবিবরণী চিত্র তুলে ধরতে বাঙলার নির্মম পরিণতির এই ঘরটিকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে নানা আয়োজন। ইতিমধ্যে সেখানে লাগানো হয়েছে কয়েকটি নীল গাছ। নির্মম এই কুঠিরটিকে এখন গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে। নির্মম সেই আমঝুপি নীলকুঠিতে প্রায় ৬০ বছর ধরে কর্তব্যরত কেয়ারটেকার বিল্লাল হোসেন জানান, ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে উপজেলা প্রশাসন আমঝুপি কুঠিরের মূল বাড়িসহ ৩ দশমিক ৬১ একর জমি প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরে হস্তান্তর করে, সেই থেকে সংস্কার কাজ চলার কারণে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। তবে এর পূর্ববর্তী সময়ের পর্যটন মৌসুমে প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে এপ্রিল সারাদেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এই কুঠি দেখতে আসতো। মাত্র ৫ টাকা প্রবেশমূল্যের টিকিট কিনে প্রতিদিন শতাধিক দর্শনার্থী ভেতরে ঢুকতো।
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর এর খুলনা বিভাগীয় প্রকৌশলী খন্দকার জিল্লুর রহমান জানান, ২০১৪ সালে আমঝুপি নীলকুঠি আমাদের অধীনে (প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর) আসে। তারপর এটিকে ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে সংরক্ষণ করার পশাপাশি ্পিপিএনবি নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে।
কোটি টাকার এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে প্রাচীরের কাজ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ ও বাড়ির সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হলে বাড়ির ভেতরে সেই সময়ের কিছু আলোকচিত্র ও কিছু নির্দশন সাজানো হবে। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের জুন শেষ হলে দর্শনার্থীরা এখানে এসে ইংরেজ আমলে আমাদের উপর চালানো শোষণ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাবেন।
আমঝুপি নীলকুঠির সামনে বাঁধাই করা স্বর্ণালী ইতিহাস্ থেকে জানা গেল, ১৯৭৮ সালের ১৩ মে খুলনা বিভাগ উন্নয়ন বোডের আমঝুপি অধিবেশনের সভায় এক সময়কার নীলকুঠি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৭৯ সালে আমঝুপি নীলকুুঠি পুননিরমাণ ও একটি আমবাগান গড়ে তোলা হয়। এজন্য সে সময় ব্যয় করা হয় প্রায় ১৯ লাখ টাকা। নির্মম সেই নীলকুঠি এখন পর্যটন কেন্দ্র । তবে কেয়ারটেকার বিল্লাল হোসেন নিজেকে প্রতক্ষ্যদর্শী দাবি করে বলেন, ১৯৭২ সালে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ তাজউদ্দিন আহম্মেদ পরিবারসহ আমঝুপি নীলকুঠি বেড়াতে এসে তেমন কোন আমবাগান না দেখে, স্থানীয়দের কাছে গ্রামের নাম আমঝুপি হওয়ার কারণ জানতে চান।
কেউ বলতে না পারায়, তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ স্থানে আম,কাঠালসহ বাগান করার জন্য তৎকালীন স্থানীয় এমপি সৈয়দ উদ্দিনকে নির্দেশ দেন, সেভাবে কাজ শুরু হলেও ১৯৭৩-১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় সব কিছু থমকে যায়। পরে ১৯৭৮ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মান্নান ভূইয়া কেডিসি প্রকল্পের অর্থে ৪৫০টি আম গাছ এবং ৫৬টি লিচু গাছ রোপনসহ সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করেন।