অর্থনীতি সমিতি’র ৯ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব
আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জাতীয় বাজেট প্রকাশের আগে একটি ‘ছায়া বাজেট প্রস্তাব’ দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এর আকার নয় লাখ ১৪ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা; যা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পেশ করতে যাওয়া বাজেটের দ্বিগুনেরও বেশি। আর গত বছরের জাতীয় বাজেটের প্রায় তিনগুণ। বৃহৎ এ বাজেটের অর্থায়নে সংগঠনটি সম্ভাব্য ২১টি নতুন খাতের তথ্যও দিয়েছে।
রোববার রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে সমিতির অডিটোরিয়ামে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব করা হয়। লিখিত প্রস্তাবনাটি পাঠ করেন সমিতির সাবেক সভাপতি ও অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত।
এ সময় তিনি বলেন, এবার আমরা ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ স্লোগানে বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছি। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এ সমিতি ছায়া বাজেট দিচ্ছে।
“আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৯ লাখ ১৪ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা; যা অর্থমন্ত্রীর পেশ করতে যাওয়া সম্ভাব্য ৪ লাখ ২৬৭ কোটি টাকার চেয়ে দ্বিগুণ। এ বাজেট হবে দ্রুত সম্প্রসারণশীল এবং বৃহদায়তন। এ বাজেটের মধ্যে রাজস্ব আয় ৭৯ শতাংশ অর্থাৎ রাজস্ব আয় থেকে আসবে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। বাকি ২১ শতাংশ অর্থাৎ ঘাটতি অর্থায়ন (১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা) যোগান দেবে সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্ব, বিদেশি বসবাসকারী দেশিয় নাগরিকদের বন্ড থেকে ২৬ শতাংশ অর্থাৎ ৪৯ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণগ্রহণ ২৩ শতাংশ অর্থাৎ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, দেশিয় ব্যাংক থেকে ঋণ ১৯ শতাংশ অর্থাৎ ৩৫ হাজার কোটি টাকা।”
আবুল বারাকাত বলেন, প্রস্তাবিত মোট রাজস্ব থেকে আয় হবে ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩১২ কোটি টাকা; যা গত অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ বেশি। প্রস্তাবিত মোট ব্যয় বরাদ্দ (অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন) হবে ৯ লাখ ১৪ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের সরকারি বাজেটের তুলনায় ৩ দশমিক ৮৯ গুণ বেশি।
“বাজেটের বৃহৎ অর্থ জোগানের জন্য নতুন ২১টি অর্থের উৎস অনুসন্ধান করেছি। এসব উৎস সরকারের হিসেবে নাই। সরকার ইচ্ছা করলে আয়ের এসব খাতকে কাজে লাগাতে পারে। এর মধ্যে নতুন তিনটি উৎস যেমন- সম্পদ কর থেকে ২৫ হাজার কোটি, অর্থপাচার রোধ থেকে ২৫ হাজার কোটি আর কালো টাকা থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা যাবে। আর ঘাটতি অর্থায়নে বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকদের বন্ড ও সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশারিত্ব থেকে এক লাখ ৯ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করা যাবে”।
বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কম দিয়ে উন্নয়খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করে বারাকাত বলেন, মোট বরাদ্দ ও আনুপাতিক বরাদ্দ উন্নয়ন বাজেট হবে অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি; যা এখন ঠিক উল্টো। বর্তমানে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ২৪ শতাংশ আর অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ৭৬ শতাংশ। কিন্ত আমরা উন্নয়নে ৫৫ শতাংশ আর অনুন্নয়নে ৪৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করছি।
সেক্ষেত্রে উন্নয়ন বরাদ্দ এখনকার তুলনায় প্রায় সাড়ে চার গুণ বেড়ে হবে ৫ লাখ ২ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। আর অনুন্নয়ন বরাদ্দ এখনকার তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ২ গুণ বেড়ে হবে ৪ লাখ ১১ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা।
সরকারকে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পরোক্ষ কর বৈষম্য বাড়ায়, তাই পরোক্ষ নয়, প্রত্যক্ষ কর বাড়ান।
সমিতির প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়, সরকারের মোট রাজস্ব আয় হবে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৬৮ শতাংশ হবে প্রত্যক্ষ কর (আয়কর) ও ৩২ শতাংশ পরোক্ষ কর (ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক)। গত অর্থবছরের বাজেটে ৪৭ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর ও ৫৩ শতাংশ ছিল পরোক্ষ কর। প্রস্তাবিত বাজেটের আয় কাঠামোতে বিত্তশালী ও ধনীদের উপর করের বোঝা অতীতের তুলনায় বাড়বে। ফলে সমাজে ধন-বৈষম্য, সম্পদ-বৈষম্য ও ক্রমবর্ধমান অসমতা কমে আসবে বলে উল্লেখ করা হয় প্রস্তাবনায়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।