কুঁড়া আর ক্যামিক্যাল মেশানো গুঁড়ামরিচ হলুদ মশলা এখন বাজারে নেই ভ্রাম্যমাণ আদালত রোজার মাসেও নেই ভেজাল বিরোধী অভিযান
টি.আই সানি,গাজীপুরঃ
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার,এমসি বাজার,মাওনা চৌরাস্তা,বরমী বাজার বাঁশবাড়ি বাজার,মাওনা বাজার,কাওরাইদ বাজার,সি.এন বি বাজার,গাজীপুর বাজার,চকপাড়া মোড়,শ্রীপুর পৌর সহড়ের আশপাশের এলাকাসহ চলছে মরিচ, হলুদ ও মসলা তৈরির ধুম। ঈদকে সামনে রেখে চলছে মরিচ, হলুদ ও জিরা মশলায় অবৈধ ভাবে ক্যামিক্যাল মেশানোর কার্যক্রম,উপজেলার ভিবিন্ন এলাকায় রয়েছে প্রায় ১৫০টিরও বেশি হলুদ মরিচ ভাঙ্গানোর অবৈধ মিল।
এর মধ্যে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন ছাড়াই চলছে ওই সকল মিল। ঈদুল আজহা সামনে রেখে মিলগুলোয় চলছে ভেজাল মরিচ, হলুদ ও গুঁড়া মশলা উৎপাদনের উৎসব। ঈদুল আজহা সামনে রেখে পাইকার ও খুচরা দোকানিরা বস্তায় বস্তায় ভরে গোডাউন জমা করে রাখছেন।
এক বস্তা (৫০ কেজি) বোম্বাই মরিচ ও ২০ বস্তা ধানের ও স’মিলের কুঁড়া, সঙ্গে সাড়ে ৫ কেজি রাসায়নিক পদার্থ (অরেঞ্জ কালার)। মেশিনে গুঁড়া করার পর তা হয়ে উঠছে এক হাজার ৫৫ কেজি গুঁড়া মরিচ। একইভাবে তৈরি হচ্ছে হলুদের গুঁড়া। আর গরম মশলার গুঁড়ায় মেশানো হচ্ছে কয়লা। প্যাকেটজাত হয়ে তা ঠাঁই নিচ্ছে ভোক্তার রান্নাঘরে। মরিচ, হলুদ ও মশলার নামে বিক্রি হওয়া এ ভেজালসামগ্রী মারাত্তক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে ভোক্তাদের।
স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়েছে বলে জানান অনেক পাইকার ও ব্যবসায়ীরা,তবে তারা কোনো প্রকার কাগজ পত্র দেখাতে পারেনি। ৩১মে বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জৈনা বাজার সহিদ মিয়ার মিল, মাসুদ সরকারের মিল, ভাড়া নিয়েছে উপজেলার টেপিরবাড়ি গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে ছাইফুল মিয়া,শরিফ মিয়া, মরিচের মিলের মেশিনে চলছে ভেজাল মরিচ ও হলুদের গুঁড়া তৈরির কাজ। এদিকে চকপাড়া মেডিকের মোড়ের পর্ব পার্শে বাদল মিয়া,স্থানীয় ইকবাল মন্ডল এর মিল ভাড়া নিয়ে প্রকাশ্যেই চলছে ভেজাল ও ক্যমিক্যাল মেশানো মরিচ ও হলুদের গুঁড়া তৈরির কাজ।
শ্রমিকরা ব্যস্থ রঙ, বোম্বাই মরিচ,ধানের ও স’মিলের কুঁড়া গুঁড়া করার কাজে। পাশেই চারজন সহকারী গুঁড়া করা এসব উপাদান আনুপাতিক হারে মেশানোর কাজে ব্যস্থ। আরেকজন ব্যস্থ মিশ্রিত ভেজাল গুঁড়া প্যাকেজিং কারখানায় নিয়ে যাওয়ার কাজে। ক্রেতা পরিচয়ে জানতে চাইলে মিল মালিক সহিদুল ইসলাম,চকপাড়া মেডিকেল মোড় মিল মালিক বাদল মিয়া,জোনাকীর মোড় মিল মালিক আম্বর আলী জানান, প্রতিদিন এক থেকে দেড় টন মরিচ, হলুদ ও গরম মশলা প্রস্তুত করার সক্ষমতা আছে তাদের। তবে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী মাসে ১০-১৫ টন উৎপাদন করেন তারা।
একই এলাকায় আম্বর আলী মরিচের মিলেও প্রতিদিন এক থেকে দেড় টন মরিচের গুঁড়া উৎপাদন হয় বলে জানা যায়। এবং বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই ঢাকা-ময়মসিহ সড়কের পশ্চিম পশে এমসি বাজার এলাকার হাজী ছোট কলিম স্কুল রোডের একটি মিলে মরিচ ও মসলা প্রস্তুত করছে।
প্রতি মাসে ১৫-২০ টন মরিচ ও গরম মশলা বাজারজাত করছে। এসব মিল থেকে কম দামে ভেজাল মরিচ, হলুদ ও গরম মশলা কিনে প্যাকেটজাতের পর বিক্রি করছে খোলা বাজার-সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
ঠিক ভেজাল নয়, একটু নি¤œমানের পণ্য ব্যবহার করা হয়। দেশের প্রতিটি এলাকায় এ মানের মরিচ ও গরম মশলার চাহিদা রয়েছে। এছাড়া এতে পুঁজি লাগে কম। কিন্তু লাভ বেশি। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি মাসে মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ী সহিদ মিয়া।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫০ কেজি হলুদের গুঁড়া তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫ কেজি আস্ত হলুদ, এক বস্তা ধানের কুঁড়া ও ১০০ গ্রাম রঙ। আর ২৫০ কেজি গুঁড়া গরম মশলায় ব্যবহার হচ্ছে এক বস্তা ধনিয়া, ৫ বস্তা ধানের ও স’মিলের কাঠের কুঁড়া, দুই কেজি খনির কয়লা, ২০০ গ্রাম এলাচ, ২০০ গ্রাম দারচিনি, ২৫০ গ্রাম গোল মরিচ ও ২৫০ গ্রাম জয়ত্রী। উৎপাদিত এ পণ্য বিক্রিও হচ্ছে অনেক কম দামে।
গাজীপুর জেলা নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, জনগণকে ধোঁকা দেওয়া ও অধিক মুনাফা লাভের আসায় মেয়াদ শেষ হওয়া পণ্য, বিএসটিআইয়ের লোগোবিহীন পণ্য বিক্রি, অধিক দামে পণ্য বিক্রি, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ও মরিচ হলুদের গুঁড়া তৈরি জব্দ করা পণ্যগুলো তাৎক্ষণিক নষ্ট করে ফেলা হয়ে থাকে। তবে অনুমোদন ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান প্যাকেটজাত হলুদ, মরিচ তৈরি করছে, বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে তাদের জরিমানা করা হয়ে থাকে।
শ্রীপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি মাসুম রেজা বলেন, এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে। আমরা অবশ্যই আইনানক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।