যে কারণে ব্যতিক্রমী এবারের বাজেট
প্রস্তাবিত বাজেট নানাভাবে ব্যতিক্রমী। আগামী অর্থবছরকে ধরা হয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের ভিত্তিবছর হিসেবে। সরকারের অগ্রধিকার খাত হিসেবে যুক্ত হয়েছে অবকাঠামো ও মানব সম্পদ উন্নয়ন। রাজস্ব খাতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার বদলে এসেছে সামাজিক সুরক্ষার ভাবনা। সর্বোপরি ব্যক্ত হয়েছে ২০৪১ সালের উন্নত দেশের স্বপ্ন।
এবারও বাজেট বক্তৃতার শিরোনামে চমক। ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের’ ব্যতিক্রমী শিরোনামে ৮৪ বছর বয়সেও সবার মাঝে স্বপ্নের আলো ছড়িয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ছাড়িয়ে গেলেন তার আগের সব বাজেট বক্তৃতাকে।
এবারের বাজেটে সবচেয়ে আলোচিত ও কঠিন বিষয় ২০১২ সালে পাশ হওয়া নতুন ভ্যাট আইনের প্রয়োগ। ভ্যাটের হার একটিই থাকলো, আর তা হলো ১৫ শতাংশ। আগামী তিন বছরের জন্য এই হার একই থাকবে। তবে স্বস্তিদায়ক দিকও রাখা হয়েছে, ভ্যাট অব্যাহতির সীমা বছরে ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৬ লাখ টাকা করা হয়েছে। বার্ষিক টার্নওভার করের সীমা ৮০ লাখ টাকার পরিবর্তে করা হয়েছে দেড় কোটি টাকা। আর মাসিক টার্নওভার যাদের সাড়ে ১২ লাখ টাকার নীচে তারা মাত্র ৪ শতাংশ হারে কর দেবেন, যা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে নেই।
প্রতি বাজেটেই করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর যে প্রচলন রয়েছে এবার তাতে কোন পরিবর্তন আনলেন না অর্থমন্ত্রী। তবে প্রতিবন্ধীদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্কের কাঠামো ৮ স্তরে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
স্বর্ণ আমদানীতে স্বচ্ছতা আনতে যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ণের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। বিশাল এই বাজেটের আয়ের সংস্থানের জন্য সাধারণ মানুষের ব্যাংক একাউন্ট থেকে বেশি টাকা নেবেন অর্থমন্ত্রী। ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক একাউন্টে থাকলে আবগারী শুল্ক ৮০০ টাকা, ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত থাকলে আড়াই হাজার টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটির বেশি থাকলে ২৫ হাজার টাকা কাটার প্রস্তাব করলেন অর্থমন্ত্রী।
আগের বাজেটগুলোর চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আনলেও বরাবরের মতো একটি বিষয়ে অবিচল অর্থমন্ত্রী। আর তা হলো এদেশের উন্নয়নের ধারাকে একনিষ্ঠভাবে ধরে রাখা। কেবল ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়াই নয়, উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বপ্নের দিগন্তকে আরো প্রসারিত করার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বললেন, এবার প্রতিজ্ঞা ৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। আর নেই লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন আর প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথ নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।