ঝিনাইদহে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে রাতের আঁধারে রাস্তা দখল
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মাঠপাড়ার অধিবাসীরা প্রায় ৬৫ বছর ধরে গ্রামের মধ্যের সোজা রাস্তা দিয়ে চলাচল করছিল। কিন্তু প্রশাসনের কোন অনুমতি না নিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে একই গ্রামের দুই ভাই রবিউল ইসলাম ও আবদুর রহমান রাতে আঁধারে সোজা রাস্তাটি খুঁড়ে ও ভেঙ্গে ফেলে রাতারাতি বাঁকা করে রাস্তাটি দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গ্রামবাসী কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় লক্ষীপুর পুলিশ ক্যাম্প ও ইউপি চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দিলে তারা কোন ব্যবস্থা নেননি। গ্রামের কেউ সোজা রাস্তাটি বাঁকা করার পক্ষে না থাকলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাস্তা বাঁকা করায় গ্রামবাসী ফুঁসে উঠেছে। তবে অভিযুক্ত দুই ভাই আবদুর রহমান ও রবিউল ইসলাম বলেন, বাড়ির সামনে দিয়ে যে রাস্তা গেছে সেই রাস্তার মধ্যে তাদের জমি আছে। তাদের জায়গা উদ্ধারের জন্য তারা রাস্তাটি সরিয়ে বাঁকা করে ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
শ্রীরামপুর গ্রামের ৯০ বছর বয়সী আফসার আলী মন্ডল জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সোজা দেখেছেন। সোজা রাস্তা দিয়েই তিনি গ্রামে যাতায়াত করতেন। কিন্তু গত ২৯ মে সকালে দেখেন সোজা রাস্তাটি দুইটি পুকুরের পাশ দিয়ে রাতারাতি রাস্তাটি বাঁকা করে দেয়া হয়েছে। পুকুরের পাশে দিয়ে রাস্তা করায় বর্ষার সময় রাস্তাটি ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যাবে। সেখানে পানি জমে গ্রামবাসীর চলাচলে দারুন অসুবিধার সৃষ্টি হবে। একই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজ জানান, তিনি ৬৫ বছর ধরে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন। রাস্তাটি সোজা ছিল। একই গ্রামের দুই ভাই রহমান ও রবিউল ইসলাম এবং তাদের মামাদের সহযোগিতায় রাতের আঁধারে প্রশাসনকে না জানিয়ে রাস্তা ভেঙ্গে রাতারাতি পুকুরের পাশ দিয়ে ইট, বালি ও খোয়া দিয়ে সোজা রাস্তাটি বাঁকা করে সরিয়ে দিয়েছেন। যা বর্ষা মৌসুম শুরু হলে রাস্তাটি চলাচলে অনুপোযোগী হয়ে পড়বে। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তারা এই অন্যায় কাজটি করেছেন। এ ঘটনায় গ্রামের ২০ জন গন্যমান্য বক্তিবর্গ স্বাক্ষরিত এক অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দিয়েছেন।
শ্রীরামপুর মাঠপাড়া গ্রামের আবদুর রহমান হারান ও তার ছেলে আজিজুল হাকিম জানান, দীর্ঘদিনের পুরাতন সোজা রাস্তা (ইটের হেরিং) দিয়ে এলাকাবাসী চলাচল করছিল। হঠাৎ করে সেই রাস্তার মধ্যে তাদের জমি আছে বলে দাবি করে সোজা রাস্তাটি জোর পূর্বক আমাদের পুকুরের পাশ দিয়ে রাতারাতি বাঁকা করে সরিয়ে দিয়ে দখল করে নিয়েছে। এ ঘটনার পূর্বে আমরা একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছি। চেয়ারম্যান ও স্থানীয় লক্ষীপুর পুলিশ ক্যাম্পেও অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু বিষয়টি কেউ আমলে না নেয়ার কারণে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাতারাতি দীর্ঘদিনের সোজা রাস্তাটি বাঁকা করে সরিয়ে দিয়ে দখলে নিয়েছেন তারা। গ্রামের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাস্তার ব্যাপারে কেউ খোঁজ খবর নিতে গেলে আবদুর রহমান ও রবিউল ইসলাম তাদের কে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এমনকি লক্ষীপুর পুলিশ ক্যাম্পের আইসি এসআই আবদুল আলীম ঘটনাস্থলে গিয়ে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে অজ্ঞাত কারণে সেখান থেকে ফিরে আসেন।
প্রশাসনের কোন অনুমনি না নিয়ে সোজা রাস্তা রাতের আঁধারে ভেঙ্গে বাঁকা করে সরিয়ে দেয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় যেকোন সময় সেখানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে। অভিযুক্ত আবদুর রহমান ও রবিউল ইসলাম দুই ভাই জানান, এই জমি আমাদের। আমরা এই জমির খাজনা দিই। আমাদের খাজনা দেয়া জমির উপর দিয়ে আমরা রাস্তা যেতে দিব না। রাস্তাটি দখলে নেয়নি সরকারি জায়গায় রাস্তাটি বাঁকা করে সরিয়ে দিয়েছি। লক্ষীপুর পুলিশ ক্যাম্পের আইসি এসআই আবদুল আলীম জানান, বিষয়টি ইউএনও স্যার জানেন। ইউএনও স্যারকে অবহিত করে তারা রাস্তা এভাবে করছে। এ ছাড়া আমি ঘটনাটি ওসি স্যারওকে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, ইউএনও সাহেব নির্দেশ দিয়েছে, তারা যেভাবে রাস্তাটি করার করুক। আমাদের প্রশাসনিক কোন ঝামেলা নেই। তুমি চলে আসো। আমি চলে আসার পর তারা রাস্তাটি এভাবে করেছে। পরবর্তীতে কি হয়েছে না হয়েছে তা আমি জানি না।
কোটচাঁদপুরের দোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীন জানান, রাস্তাটি সোজা রাস্তা, ঘুরিয়ে বাঁকা করবে। তাকি এলাকার লোক করতে দেয়? আগে পুকুর ছিল সেই দিক দিয়ে ঘুরিয়ে রাস্তাটি এখন বাঁকা করছে। তিনি আরো জানান, এলাকার মানুষ যেহেতু রাস্তাটি সোজা চাই তাহলে আমি রাস্তাটি বাঁকা চাইবো কেন? তিনিও রাস্তাটি বাঁকা করার পক্ষে নন। কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী ইসলাম বলেন, আমার কাছে রাস্তার বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। কিন্তু অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকায় আামি সরেজমিনে যেতে পারিনি। এরইমধ্যে তারা রাস্তাটি ভেঙ্গে বাঁকা করে নতুন করে তৈরি করেছে শুনেছি। আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে যাবো এবং কিভাবে তারা এটা করলো তার ব্যবস্থা নিব।