পলিথিন ঠেকাতে আসছে পরিবেশবান্ধব পাটের পলিব্যাগ
আসাদ আল মাহমুদ :
পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ পলিথিন। অপচনশীল এই বস্তুটি ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। যা মাটি ও পানি দূষণের অন্যতম কারণ। পলিথিন স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
পলিথিনের ব্যবহার ঠেকাতে পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে পাতলা পলিব্যাগ। যা দেখতে বাজারে প্রচলিত পলিথিনের ব্যাগের মতো। এগুলো ব্যবহারের পর ফেলে দিলে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে এবং পানিতে ফেললে পচে যাবে। পুড়িয়ে ফেললে ছাই হয়ে হবে।
পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, আগামী পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাটের পলিব্যাগ উৎপাদন শুরু হবে। দুই-তিন মাসের মধ্যে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আনা হবে। সরকারিভাবে উৎপাদনের পর বেসরকারিভাবেও এই ব্যাগ উৎপাদনে সহায়তা দেওয়া হবে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা হবে পাটের পলিব্যাগ।
তিনি আরো বলেন, বাজারে যে পলিথিন ব্যাগ আছে তার চেয়ে পাটের পলিব্যাগ দেড় গুণ বেশি টেকসই। ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ পাওয়া যাবে পাটের ব্যাগে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) তত্ত্বাবধানে পথিলিনের বিকল্প পাটের তৈরি পলিব্যাগ উদ্ভাবন করেছে বিজেএমসির প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের প্রাক্তন মহাপরিচালক ড. মোবারক আহমেদের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন মোড়ক তৈরিতে ব্যবহৃত হবে। তারা বর্তমানে এই ব্যাগ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে তৈরি করেছেন। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আসার পর বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা হবে।
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এ পাটের পলিব্যাগ দেখতে প্রচলিত পলিথিনের ব্যাগের মতোই হালকা ও পাতলা। পাটের সুক্ষ্ম সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে এ ব্যাগ তৈরি করা হবে। পাটের তৈরি এ পলিব্যাগ দেখতে পলিথিনের ব্যাগের মতো হলেও মাটিতে ফেললে তা পচে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হবে না। এ ব্যাগ দামেও সাশ্রয়ী হবে। এভাবে পাটের ব্যবহার বাড়লে ন্যায্যমূল্য পাবেন কৃষক। অতীতের মতোই পাট দিয়েই বিশ্বে সুপরিচিত হবে বাংলাদেশ।
পাটের তৈরি পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ বাজারে এলে এই ক্ষতিকর প্রচলিত পলিথিনের ব্যবহার কমবে বলে ধারণা করছে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পলিথিনের মোড়কে থাকা খাবার খেলে ডায়রিয়া, আমাশয়, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া পলিথিনের প্রভাবে মাটির চারটি উপাদান সমভাবে মিশতে পারে না। ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়। মাটিতে চাপাপড়া পলিথিন কৃষিজমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
তিনি আরো বলেন, পাটের তৈরি পলিব্যাগ মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। দূষিত হবে না পরিবেশ। পাটের ব্যাগ দামে সাশ্রয়ী হবে। পাটের ব্যবহার বাড়লে ন্যায্য দাম পাবেন কৃষক। বিগত দিনের মতোই পাট দিয়েই বিশ্বে সুপরিচিত হবে বাংলাদেশ।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, বর্তমান সরকার কাঁচা পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বড়ানো এবং পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন বর্জনের ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সারা বিশ্ব এখন পলিথিনের বিকল্প খুঁজছে। আমরা পাটের পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ দিয়ে এ বাজার ধরতে পারব। বিশ্বে পাট পলিমারের একমাত্র জোগানদাতা হবে বাংলাদেশ। আমাদের পরিকল্পনা আছে, সারা বিশ্বে পাটের পলিমার ব্যাগের বাজার দখল করার।
তিনি জানান, আগামীতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পলিথিনের মতোই পাটের পলিব্যাগ উৎপাদন শুরু করা হবে। তিন মাসের মধ্যে বিদেশ থেকে আনা হবে যন্ত্রপাতি। সবকিছু করা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে। সরকারিভাবে উৎপাদনের পর বেসরকারিভাবেও এই ব্যাগ উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া হবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হবে। বাজারে যে পলিথিন ব্যাগ আছে তার চেয়ে দেড় গুণ বেশি টেকসই হবে পাটের পলিব্যাগ। ব্যবহারেও স্বাচ্ছন্দ পাওয়া যাবে।