ভরা বর্ষায় ভাল নেই সুনামগঞ্জের অবহেলিত হাওরবাসীর কণ্ঠে কেবলেই শুধু বাচাঁর আকুতি
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
ভরা বর্ষায় ভাল নেই সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার বিভিন্ন উপজেলার হাওরাঞ্চলের মানুষ। অকাল বন্যায় একের পর এক হাওর ডুবে জেলার ৯০শতাংশ বোরো ধান পানিতে তুলিয়ে যাওয়ায় পর থেকেই হাহাকার বিরাজ করছে সর্বতই। বেশির ভাগেই হাওরবাসী অর্ধহারে,অনাহারে,অভাব-অনটন কে সঙ্গী করে কষ্টের জীবন পার করছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় ও সরকারের সুদৃষ্টি না পড়ায় এই মানব সম্পদ এখন সমাজের ভোজা হচ্ছে দিন দিন। যার জন্যে এই অনুন্নত অবহেলিত হাওরবাসীর কণ্ঠে কেবলেই শুধু বাচাঁর আকুতি। সরকার হাওরবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা,মিল-কলখারকানা,বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ সহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করলেও হাওরাঞ্চলের ব্যাপারে উদাসীন। ফলে এভাবেই যুগযুগ ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ক্ষুদা,দারিদ্রতা,রোগ শোক,যোগাযোগ,অশিক্ষা,অন্ধ গোড়ামী আর অবহেলা নিয়ে হাওরবাসী। এসব পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেকেই অবস্থান করছে আবার অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে অন্যত্র আর এভাবেই চলছে সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চল বাসীর জীবন যুদ্ধ। জানাযায়,বর্ষার ৬মাস এখন জেলার ছোট-বড় বিভিন্ন হাওর পানিতে ভড়ে কানায় কানায় পরিপূর্ন। এখন হাওরে মাছ নেই তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-জীবিকা সন্ধানের খোঁেজ না পেয়ে চরম দুশচিন্তায় রয়েছে হাওরবাসী।অকাল বন্যায় একমাত্র সম্পদ বোরো ধান হারিয়ে বুক ভরা র্দীঘশ্বাস নিয়ে হাওরপাড়েই বিকল্প কাজের ব্যবস্থা না থাকায় একবারেই বেকার সময় পাড় করছে লাখ লাখ পরিবার। এবার জেলার দিরাই,শাল্লা,জগন্নাথপুর,ধর্মপাশা,জামালগঞ্জ,দোয়ারা বাজার,বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার হাওর গুলোতে অকাল বন্যায় স্বরনকালের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এক ফলসী বোরো ধান চাষ করা কৃষক পরিবার গুলোর। হাওর ডুবে যাওয়ার পর থেকে সরকারী সহযোগীতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ফসলহারা কৃষকদের জন্য নেওয়া সরকারী সহায়তাও শেষের দিকে। ইতি মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে খোলা বাজারে চাল বিক্রির কার্যক্রম। চলতি মাসের শেষের দিকে শেষ হবে প্রান্তিক,দরিদ্র ও ক্ষুদ্র চাষীদের জন্য নেওয়া বিশেষ বরাদ্ধ ভিজিএফ কার্ডের কার্যক্রম। সরকারী সহায়তার পাশা পাশি বেসরকারী ত্রান সহায়তাও কমে আসছে দিন দিন। এতে করে হাওরপাড়ে অভাব দিন দিন প্রকট আকার ধারন করবে। আরো জানাযায়,অকাল বন্যায় জেলায় হাওর ডুবে যাওয়ার পর গত ১০এপ্রিল ৪২টি পয়েন্টে ১৫টাকা কেজি ধরে চাল বিক্রিয় শুরু হয়। এর আরো ৬৮টি ওএমএস কেন্দ্র চালু করা হয়। এসব কেন্দ্রে সাপ্তাহে ৬দিন শনিবার ছাড়া প্রতিদিন ১৫টাকা কেজিতে ২শত মানুষের মধ্যে ১টন চাল বিক্রি করা হত। ৩০জুন ওএমএস চাল বন্ধ হয়ে গেছে। গত এপ্রিল মাসের ২৩তারিখে ৩মাসের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ ঐসব কৃষকদের জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্ধ ভিজিএফ কার্ড চালু হয়। এতে প্রতিটি পরিবার ৫শত টাকা ও ৩০কেজি চাল সহায়তা পাচ্ছে। এই সহয়তাও বন্ধ হবে ৩০জুলাই। জেলার তাহিরপুরের বীরনগড় গ্রামের সাদেক আলী,শফিক,সবুজ,সোহাগ মিয়া জানান,সরকারী যে সহায়তা দিয়েছে তার মধ্যেও চেয়ারম্যান ও মেম্ভারগন করেছে চরম দূর্নীতি। এর পরেও হাওর পাড়ের লাখো কৃষক পরিবার সরকারী সহায়তা পাইয়া কোন রখমে খুড়িয়ে খড়িয়ে জীবন চলছে এই সহয়াতা বন্ধ হলে সামনের দিন গুলো কিভাবে পার করবে এই নিয়ে উৎবেগ আর উৎকণ্ঠায় আছে আগামী ফসল উঠার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত সরকারী সহায়তা বাড়ানো উচিত। দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়নের দুমাল গ্রামের ইসলাম উদ্দিন,রামসিমপুর গ্রামের তারা মিয়া,আলী আজগড় জানান,এই বার ত সব শেষ করে দিছে পানিতে নিছে গা সব ধান। বর্ষায় অনেকেই কারেন্ট জাল,কোনা জাল,বেড়জাল দিয়া হাওরে নেমে পড়ে মাছ ধরার লাগি এখন হাওরে মাছ নাই তাই খাইয়া না খাইয়া দিন পারকরতাছি। অন্য কোন কাজের ব্যবস্থা নাই এখন সরকারী সহযোগীতা বাড়ানো উচিত। না হইলে আমরা চলমো কেমনে। সরকারী যে চাল দেয় তাও এক বারেই বাজে দূগন্ধ করে তার পরও কোন রখমে কাইতে পারি না পাইলে খাইমো কি। অপু,সাজিদ মিয়া,করিম মিয়া সহ জেলার বিভিন্ন হাওরপাড়ের লোকজন জানান-সরকারী সাহায্য যা পাইছি তা কোন রখমে এক বেলা খাইয়া দু বলা উপোষ থাইকা চলছি। ওএমএস বন্ধ শুনতাছি সামনের মাসে নাকি ভিজিএফ বন্ধ হইয়া যাইব তাইলে কেমনে চলমো কামকাজ একবারেই নাই। বৈশাখ মাসের আগেই চৈত্র মাসে বৃষ্টির পানির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে ৯০ভাগ বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষক পরিবার গুলোর চাষাবাদের গরু আর গোলা(ধান রাখার পাত্র) এখন শূন্য। পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুস পুরকাস্থ টিটু সহ জেলার সচেতন মহল মনে করেন-শিক্ষা,স্বাস্থ্য,যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনী ও যুগপযুগী পদক্ষেপের মাধ্যমে হাওরাঞ্চলবাসীর উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে হাওরবাসীরা তাদের জীবন মানের উন্নয়ন গঠাতে সক্ষম হবে। সরকারী সহযোগীতা বন্ধ না করে সময় বাড়ানো খুবেই প্রয়োজন। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান-বর্তমানে সরকারী ভাবে ওএমএস চাল ও ভিজিএফ কার্ডের সময় শেষের পথে এই সুবিধা বন্ধ হলে চরম দূভোর্গে পড়বে হাওরবাসী। সময় ও সহায়তা বাড়ানো খুবেই প্রয়োজন। আর এক ফসলী বোরো ধানের উপর নির্ভরশীল না থেকে হাওরের বিশাল জনগোষ্টীকে বিকল্প কাজের মাধ্যমে সম্পদে পরিনত করার জন্য মিল-কলখারকানা স্থাপন,কুটির শিল্প ও হাওরে বিশাল নারী গোষ্টীকে হস্ত শিল্পে পারদর্শী,আধুনিক,উন্নত প্রশিক্ষনের মাধ্যমে হাসঁ ও মুরগি লালন-পালনের সঙ্গে যুক্ত করা হলে করলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে।