‘দুই দল’ নিয়ে টানা তিন মৌসুম তৃতীয় বিভাগ বাছাই!
তিন মৌসুম ধরে তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে অংশ নিয়ে আসছে মাত্র দুটি করে দল। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তৃণমূলের অনেক ক্লাব বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছে না। দুটি দলের বেশি না হওয়ায় মাঠে খেলাও হচ্ছে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাছাইয়ে অংশগ্রহণ ফি ৭৫ হাজার টাকা থেকে এক লাফে ৫ লাখ টাকা করায় কমে এসেছে দলের সংখ্যা।
প্রত্যেক মৌসুমে ওই দুটি করে দলই সুযোগ পেয়ে থাকে তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগের খেলার! দুটি দলের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ ঠিক করতে একটি ম্যাচ আয়োজনের প্রয়োজন অবশ্য পড়ে। গত সোমবার ২০১৬-১৭ মৌসুমের বাছাইয়ের ম্যাচে নবাবগঞ্জ ক্রিকেট কোচিং একাডেমি ও পূর্বাচল স্পোর্টিং ক্লাবের ম্যাচে বৃষ্টি হওয়ায় টসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা সেরেছে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস (সিসিডিএম)।
সর্বোচ্চ ২০টি দল নেওয়ার সুযোগ থাকে বাছাইয়ে। লিগ পর্বে সবার সঙ্গে সবাই খেলে সেরা দুই দল উঠবে তৃতীয় বিভাগে। কিন্তু তিন মৌসুম ধরে অংশগ্রহণকারী দল মাত্র দুটি হওয়ায় এক অর্থে মাঠে খেলারই প্রয়োজন পড়ছে না।
তারপরও অংশগ্রহণ ফি কমানোর কোনও উদ্যোগ নেই বিসিবির। সিসিডিএমের সদস্য ও তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ের সমন্বয়ক জাহেদ আলী কল্লোল এটিকে ‘সমস্যা’ হিসেবে দেখতে নারাজ। চ্যানেল আই অনলাইনের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, ‘আগ্রহ থাকলে টাকা কোনও সমস্যা না। আগ্রহ বোধ করলে এই পরিমাণ টাকা দিয়েই টিম এন্ট্রি করবে। বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন উন্নত পর্যায়ে চলে গেছে। যদি কম এন্ট্রি ফি করা হয় তাহলে আজেবাজে লোক ঢুকে এখানে বাজে পরিস্থিতি তৈরি করে। তারা ছেলেদের কাছ থেকে টাকা তুলে টিম নিয়ে নেয়।’
বিসিবি বলছে নামসর্বস্ব একাডেমিগুলোকে বাদ দিতেই বাড়ানো হয়েছে অংশগ্রহণ ফি। কিন্তু তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে নাম লেখাতে হলে একাডেমিগুলোর সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন থাকতে হয়। তার সঙ্গে আরও বেশকিছু নতুন নিয়ম যোগ হয়েছে। তাহলে পাঁচ লাখ টাকার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কেন, সেটি কারোরই বোধগম্য নয়।
ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল দলের সংখ্যা কমে আসাকে ভালো চোখে দেখছেন না, ‘দলের সংখ্যা যত বাড়বে তত দেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো। দল কেন কমে আসছ সেটি বিসিবিই ভালো বলতে পারবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক কর্মকর্তা বললেন, ‘ঢাকায় ৭৪টা ক্রিকেট একাডেমি আছে। অনেকেরই আর্থিক সঙ্গতি নেই পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করার। ছেলেদের কাছে মাসিক বেতন ৫০০-১০০০ টাকা নিয়ে তারা চলে। অবশ্যই এন্ট্রি ফি কমানো উচিত। একাডেমিগুলো এখন তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে দল নেওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে দিচ্ছে।’
একাডেমিগুলোর অভিযোগ, এন্ট্রি ফি পাঁচ লাখ টাকা করার অর্থ দল কমানোর কৌশল। দল নিতে একাডেমিগুলোর এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই বুঝেই করা হয়েছে এই নিয়ম। বিত্তবান ও প্রভাবশালীরাই যাতে কেবল দল দিতে পারে। এরপর নামমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃতীয় বিভাগে উঠে গেলেই সুগম হয়ে যাবে বিসিবির কাউন্সিলর হওয়ার পথ।
২০১৪-১৫ মৌসুমে বাছাইয়ে নাম লেখানো সেই এক্সিওম ক্রিকেটার্স পরের দুই মৌসুমে তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ টপকে উঠে এসেছে প্রথম বিভাগে। আগামীবার নিশ্চয়ই প্রিমিয়ার লিগেই উঠে আসবে তারা! গেল দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে এই ক্লাবটির পক্ষে আম্পায়ারদের পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বিস্তর।
বাজে আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদে ৪ বলে ৯২ রান দিয়েছিলেন লালমাটিয়া ক্লাবের বোলার সুজন মাহমুদ। পরে বিসিবি ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে ওই ক্রিকেটারকে।
বিসিবির বয়সভিত্তিক কর্মসূচির পরই তৃতীয় বিভাগের বাছাই হল ক্রিকেটের উঠে আসার পথ। ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারদের বেধে রেখে এই জায়গাটা দখল করে নিচ্ছেন কিছু প্রভাবশালী সংগঠক। বিসিবির কাউন্সিলরশিপ পাওয়ার জন্য দেশের ক্রিকেটের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার পায়তারা করছেন তারা। সব নিয়ম পালন করার পরও অনেক ক্লাব-একাডেমিকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ একাধিক ক্লাবের।
হরহামেশা উঠতে থাকা এমন অভিযোগ সিসিডিএম অবশ্য অস্বীকার করছে। তারা বলছে, তিন মৌসুম ধরে দুটি ক্লাবই কেবল তাদের কাছে আবেদন করেছে।