নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুনের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী, নুহাশপল্লীতে নানা আয়োজন
প্রায় ৪ দশক ধরে সাহিত্যের বিচিত্র জগতে বিচরণ করেছেন; পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন মধ্যবিত্ত জীবনের কথা, সহজ সরল গদ্যে— ছোটগল্প, টিভি নাটক বা চলচ্চিত্রে- যেখানেই হাত দিয়েছেন, সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছেন হুমায়ুন আহমেদ।
নন্দিত এই কথাসাহিত্যিকের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে নানা আয়োজনে। লেখকের নিজের সৃষ্ট প্রাকৃতিক নৈসর্গ নুহাশ পল্লীতে ভিড় করেছেন ভক্তরা। তাদের কেউ পড়েছেন হিমু চরিত্রের হলুদ পাঞ্জাবী, কেউ বা আবার রূপার অবয়বে নিজেকে সাজিয়েছেন।
এ উপলক্ষে তার পরিবারের পক্ষ থেকে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে নুহাশ পল্লীতে এই কথাশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করতে থাকেন ভক্তরা। এছাড়া তার নিজের প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে দোয়া মাহফিল।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন। দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে লেখালেখি করে কালজয়ী চরিত্র মিসির আলী ও হিমু সৃষ্টি করেন তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তা পিতা ফয়েজুর রহমান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীন হন। মা আয়েশা ফয়েজ, লেখালেখি করে সুনাম কুড়িয়েছেন। ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিউইয়র্কে ২০১২ সালের এই দিনে মারা যান জনপ্রিয় কথাশিল্পী, চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাতা।
কিছু কথা:
প্রায় ৪ দশক ধরে সাহিত্যের বিচিত্র জগতে বিচরণ করেছেন; পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন মধ্যবিত্ত জীবনের কথকতা, সহজ সরল গদ্যে। ছোটগল্প, টিভি নাটক বা চলচ্চিত্রে- যেখানেই হাত দিয়েছেন, সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছেন হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ূন আহমেদ। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকার। ছাত্রাবস্থায় প্রথম উপন্যাস 'নন্দিত নরকে' দিয়ে সাহিত্যের জগতে তার আত্মপ্রকাশ। প্রথম লেখাতেই জয় করেছিলেন পাঠকের মন। চার দশক ধরে জনপ্রিয় এ কথা সাহিত্যিক তৈরি করেছেন বিশাল পাঠক সমাজ। আশির দশকে শুরু থেকে আমৃত্যু একুশের বইমেলায় ছিলেন পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে। মধ্যবিত্ত জীবনের আনন্দ-বেদনা আর টুকরো টুকরো অনুভূতি আনায়াসে উঠে এসেছে তার লেখায়। প্রেম-বিরহের তীব্র অনুভূতি ফুটিয়ে তুলেছেন মর্মস্পর্শী কথনে।
বিটিভিতে প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রির’ মধ্যদিয়ে টিভি নাটকের গতানুগতিক ধারা বদলে দেন হুমায়ূন আহমেদ। বহুব্রিহী, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই-এর মতো ধারাবাহিকগুলো তাকে অসামান্য খ্যাতি এনে দেয়। পরবর্তীতে তার নির্মিত চলচ্চিত্র অনেক বছর পর সিনেমী হল অভিমুখী করে মধ্যবিত্তকে। চলচ্চিত্র ও লেখনী দিয়ে জিতেছেন বাংলা একাডেমি, জাতীয় চলচ্চিত্রসহ অনেক পুরস্কার।
প্রিয় নুহাশ পল্লীতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন হুমায়ূন, এখানকার ছেট ছোট জলাধার, গাছপালা, সবুজ গালিচা সবকিছুতেই তাঁর ছোঁয়া লেগে আছে। তাই মৃত্যুবার্ষিকীতে ভক্ত অনুরাগীরা ভিড় করেছেন সেখানে।
মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে অসীম কৌতুহল উঠে এসেছিলো হুমায়ূন আহমেদের নানা লেখায়। ২০১২ সালের ১৮ জুলাই সেই রহস্যময় অনন্তের পথে যাত্রা করেন তিনি। তার লেখনির অসামান্য বৈচিত্র আর তিন দশকের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে আজীবন।