কালীগঞ্জে দূর্বৃত্তের গুলিতে সাবেক সাংসদ পুত্র নিহত
লোকমান হোসেন পনির, কালীগঞ্জ, গাজীপুরঃ কালীগঞ্জে গত রবিবার রাতে দূর্বৃত্তের গুলিতে সাবেক এক সাংসদ পুত্র খুন হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে একজন ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে আটক করেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, কালীগঞ্জের সাবেক সাংসদ মোখলেছুর রহমান জিতু মিয়ার পুত্র হাবিজুর রহমান ফয়সাল মিয়া (৩২) রাত পৌনে আটটার দিকে ভাদগাতী গ্রামের জাকির মীর্জার মুদি দোকানে বসে গল্প করছিল। এসময় একটি গুলির শব্দ হলে ফয়সাল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা গ্রামের মোসলেহউদ্দিন মাষ্টারের পুত্র বখাটে রিমনকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখে। প্রায় এক ঘন্টা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ফয়সাল পড়ে থাকলেও কেউ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। পরে স্বজনরা খবর পেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ফয়সালকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ গ্রামের হানিফার পুত্র নওশাদ এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আক্কাস উদ্দিনের পুত্র হারুন, মনর উদ্দিনের পুত্র মহি, বাছির উদ্দিনের পুত্র সুমন, ওসমানের পুত্র তারা ও মুদি দোকানী জাকিরকে আটক করে।
মুদি দোকানী জাকির মীর্জা জানায়, আমি দোকানের ভিতর থেকে গুলির শব্দ পেয়ে দেখি ফয়সাল মাটিতে পড়ে আছে। তবে এসময় আমি সন্ত্রাসী রিমনকে পালিয়ে যেতে দেখি।
অপর দোকানী হারুন জানায়, গুলির শব্দ পেয়ে আমি দ্রুত জাকিরের দোকানে এসে দেখি ফয়সাল মাটিতে পড়ে আছে এবং রিমন দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আমি ফয়সালের মাথায় পানি দিয়ে ডাকাডাকি করেও তার কোন সাড়া পাইনি।
একটি সূত্র জানায়, রাত আনুমানিক সাড়ে আটার দিকে রিমন পৌর কাউন্সিলর পরিমল চন্দ্র ঘোষের মোবাইলে ফোন দিয়ে গুলি করার কথা স্বীকার করে।
কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার সুলতান মাহমুদ জানান, নিহত ব্যক্তির বাম পাজরের নীচে একটি ছিদ্র রয়েছে। সম্ভবত ফুসফুসে আঘাতের কারণে হাসপাতালে নিয়ে আসার পূর্বেই সে মারা যায়। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়।
সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী এস আই মুজিবুর রহমান জানান, নিহতের বাম পাজরে ও বাম চোখের নীচে আঘাত রয়েছে।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে একজনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সোমবার সকালে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ-কাপাসিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ দত্ত জানান, খুনের মোটিভ এখনো জানা যায়নি। ইতিমধ্যেই হত্যা ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সন্ত্রাসী রিমনের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে সে দীর্ঘদিন জেল হাজতে ছিল।
ফয়সালের পিতা প্রয়াত মোখলেছুর রহমান জিতু মিয়া কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৭৩ সালে কালীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৯৭৯ সালে বিএনপি’র প্রার্থী এবং ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।