যেভাবে ক্রিকেটার বানায় বাংলাদেশ
গ্রাম থেকে জেলা শহর। জেলা শহর থেকে রাজধানী। তারপর বাংলাদেশ জাতীয় দল! খুব কঠিন? খুব সহজ? উত্তর খোঁজার আগে কিছু প্রক্রিয়ার দিকে চোখ রাখতে হবে। যে প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে জাতীয় দলের জন্য ক্রিকেটার তৈরি করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বাংলাদেশে মূলত তরুণ ক্রিকেটার খোঁজার দুটি কর্মসূচি রয়েছে। এক. বিকেএসপি। দুই. বয়সভিত্তিক প্রতিভা অন্বেষণ। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন এ দুটি কর্মসূচি বিসিবির আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। বয়সভিত্তিক দল কিংবা বিকেএসপিতে না খেলে জাতীয় পর্যায়ে উঠে আসার উদাহরণও আছে। তবে সেই সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়।
রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারে ক্রিকেটার খোঁজার একটি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগরের বয়সভিত্তিক (অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬ ও ১৮) প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির প্রথম ধাপ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে।
চারদিনব্যাপী চলা এই কার্যক্রমে অংশ নেয় ৮২টি একাডেমির ৩৫ জন করে প্রশিক্ষণার্থী। একাডেমির বাইরের প্রতিভাবান কিছু খেলোয়াড়ও সুযোগ পেয়েছেন, যারা ইতিমধ্যে কোথাও না কোথাও তাদের প্রতিভার প্রমাণ রেখেছেন। সব মিলিয়ে ঢাকায় সংখ্যাটা তিন হাজারের মতো।
ঢাকার বাইরে সারা দেশে বয়সভিত্তিক খেলোয়াড় বাছাই শুরু হবে ঈদুল আজহার পর। গত বছর দেশজুড়ে বিসিবির তিনটি বয়সভিত্তিক খেলোয়াড় বাছাইয়ে প্রাথমিক ধাপে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৩০ হাজার তরুণ। ধাপে ধাপে বয়সভিত্তিক মূল দলে সুযোগ পেয়েছেন ৮২ জন।
তিন হাজার থেকে ৮২ জনকে বাছাই করার ভেতরে যে প্রক্রিয়া, সেটি নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন বিসিবির গেম ডেভলপম্যান্ট বিভাগের সহকারী ম্যানেজার বুলবুল বাশার।
‘প্রথমে আমরা মেডিকেল করি। বিসিবির ফিজিওরা দেখে বয়স সম্পর্কে একটা ধারণা করেন। সার্টিফিকেটও দেখা হয়। আমরা তাদের প্রকৃত বয়স নির্ধারণ করি না। নির্ধারণ করি সে কোন বয়সভিত্তিক গ্রুপে খেলবে বা খেলার জন্য উপযোগী। যদি কেউ মনে করে তার মেডিকেল ঠিক হয়নি সে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। তখন আমরা বোন টেস্ট করাই।’
স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরের ধাপ ক্রিকেটার নির্বাচন। এই বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হলে কোনও নিবন্ধিত একাডেমি থেকে আসতে হয়। একটা একাডেমি থেকে সর্বোচ্চ আটজন ও কমপক্ষে পাঁচজন ক্রিকেটার রাখা হয়। নির্বাচনের জন্য ১৪ জন করে আটটা টিম করা হয়। স্ট্যান্ডবাইসহ ১১০-১১৫ জন হয়।
পরবর্তী প্রক্রিয়া নিয়ে বিসিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কমপক্ষে ১৫টা ম্যাচ হয়। দুইটা গ্রুপ করি। প্রথমে ছয় থেকে সাতটা ম্যাচ হয়। ম্যাচ হওয়ার পর গ্রুপ পদ্মা, গ্রুপ মেঘনা করা হয়। পদ্মা থেকে সেরাদের নিয়ে দুটি টিম আবার মেঘনা থেকে সেরাদের নিয়ে দুটি টিম করি। এরা আবার দুইটা ম্যাচ খেলে। খেলার পর সেরা পদ্মা ও সেরা মেঘনা দল গঠন করা হয়। দুই দলে ১৪জন করে যে ২৮ জন খেলোয়াড় থাকে তাদের আমরা ক্যাম্পে নিয়ে আসি। স্কিল ক্যাম্প শেষ হওয়ার পর ১৪ জনকে নিয়ে ঢাকা মেট্রো টিম গঠন করি।’
বয়সভিত্তিক এই প্রক্রিয়ার বাইরে প্রতি বছর বিকেএসপিতে ক্রিকেট বিভাগে তরুণদের ভর্তি করা হয়। বিকেএসপির ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেয়া আছে।
এই দুটি কর্মসূচির বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মাঝে মাঝে ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ নাম দিয়ে ক্রিকেটার খোঁজে। সেখানেও বিসিবি সহায়তা করে। নিয়মিত পত্রিকায় চোখ রাখলে এসব কর্মসূচি সম্পর্কে খোঁজ-খবর পাওয়া যায়। গ্রামীণ ফোনের এমনই একটি পেসার হান্ট কর্মসূচি থেকে উঠে আসেন বাগেরহাটের রুবেল হোসেন। তার উত্থানের গল্পটা কিছু সময়ের জন্য কঠিন ছিল। ঢাকায় আসা থেকে শুরু করে কর্মসূচির চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়া পর্যন্ত সেই ‘কঠিনেরেই ভালোবেসেছিলেন’ তিনি। তারপরের গল্পটা সহজ।