বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া আটকে আছে আইনি জটিলতায়
নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গবন্ধুর দণ্ডপ্রাপ্ত ১২ খুনির বহু স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া আটকে আছে আইনি জটিলতার কারণে। ২০১০ সালে গঠিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের টাস্ক ফোর্স বর্তমান আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে সচল হয়। বিগত তিন বছরে বঙ্গবন্ধুর কয়েকজন খুনির কিছু সম্পত্তি সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে। তবে বাজেয়াপ্ত করার কাজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি কর্নেল ফারুক ২০১০ সালে আরো চারজন খুনির সঙ্গে ফাঁসিতে ঝোলে। অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত বনানীতে সামরিক বাহিনীর আবাসিক এলাকা পুরোনো ডিওএইচএস-এ তার জমি ও বাড়ি আছে। ১৯৯৬ সালে সে মায়ের নামে হস্তান্তর করে এই স্থাবর সম্পত্তি। তা ছাড়া ক্যান্টনম্যান্ট বোর্ডের অধীনে হওয়ায় এ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হচ্ছে না রাজউকের। ফাঁসিতে ঝোলানো পাঁচ খুনির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা পরিবর্তন হওয়ায় সেগুলো বাজেয়াপ্ত করতে আইনি বিধানের প্রয়োজন বলে জানালেন আইনমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, “মারা যাওয়ার পরে স্বাভাবিকভাবেই তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য একটা আইন লাগবে। এবং সেক্ষেত্রে এ আইনটা কীভাবে করা যায়, আইনের যে গাইডিং প্রিন্সিপালস (দিকনির্দেশনা) সেগুলো যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, সেই চিন্তাভাবনা করেই সংসদে এ আইন করার একটা অঙ্গীকার আমি দিয়েছ। এ আইন করার ব্যবস্থাো গ্রহণ করা হচ্ছে।”
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আরো সাত আসামি পলাতক রয়েছে। তাদের একজন আজিজ পাশা ২০০২ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা গেছে। বাকি ছয়জন নানান দেশে অবস্থান করছে। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা নেই। তবে এদের সবাই সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তর করায় বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বেশি সময় লাগছে ।
ইতিমধ্যেই কর্ণেল রশীদ ও মেজর ডালিমের সম্পত্তি বহুলাংশে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়ে আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অনেক আসামিই হয়তো বেনামে তাদের সম্পত্তি রক্ষা করেছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় দণ্ডপ্রাপ্ত ১২ খুনির স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা তৈরির কাজ এখনও চলছে। পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা সময়সাপেক্ষ ব্যপার। ফাঁসিতে ঝোলা কর্নেল ফারুকের ৩০ হাজার শেয়ার আছে জুবলি ব্যাংকে। এখানে পলাতক খুনি কর্নেল রশীদের আছে ৫৫ হাজার শেয়ার। এ ছাড়াও রশীদের গুলশানের প্লট আছে ভিন্ন নামে। গাজীপুরের চান্দিনায় ছয় একর জমি এখনও রশীদের নিজ নামে আছে। কানাডায় পলাতক নুর চৌধুরীর গুলশানের প্লট ২০১৩ সালে রাজউক বাতিল করে। তবে গুলশানে তার আরো সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে সরকার। এই অভিজাত এলাকায় মেজর ডালিমের প্লট এখনও বাজেয়াপ্ত করতে পারা যায়নি। ধানমণ্ডি ও মোহাম্মদপুরে ডালিমের আরও ১৫ কাঠা জমির খোঁজ পেয়েছে সরকার।
এক বছর আগে জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের যে প্রস্তাব পাশ হয়, তার উত্থাপনকারী সংসদ সদস্য নিজেও খোঁজ রাখছেন এসব কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে। আইনমন্ত্রীর সাথে নিয়মিত কথা হয় বলে জানিয়ে সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি দ্রুত খুনিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দেশের যে জায়গায়ই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সম্পত্তির খোঁজ মিলছে, সেগুলো স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সহায়তায় বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।