২১ আগস্ট হামলা: এবছরেই শেষ হতে পারে বিচারকাজ
এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারের রায় হতে পারে বলে আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে আসামিপক্ষ সময়ক্ষেপণ না করলে স্পর্শকাতর এই মামলাটি দ্রুতই শেষ হয়ে যেত বলে রাষ্ট্রপক্ষের দাবি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান।
তিনি বলেন, প্রকৃত অপরাধীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতে বিএনপি-জামাত আমলে তদন্ত প্রভাবিত করাসহ বিভিন্ন নাটক তৈরি করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরদিনই ২২ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করে ওইসময় বিএনপি-জামাত জোট সরকার বোঝাতে চেয়েছিল এ ঘটনার তদন্ত ও বিচারের তৎপর। মামলাটির তদন্ত শুরুতেই চলে যায় ভিন্নখাতে। ধুয়ে মুছে চেষ্টা করা হয় সব আলমত নষ্টের। জানা যায় না কারা হামলাকারী, তাদের সামনে-পেছনের কাউকেই। অবতারনা ঘটে 'জজ মিয়া' নাটকের।
এরকম পরিপ্রেক্ষিত থেকেই ২১ আগস্টের হামলার দুটি মামলার তদন্ত হয় তিন দফায়। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শুরু হয় ২য় পর্যায়ের তদন্ত। ২০০৮ সালের ১১ জুন জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২জনের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। একটি হত্যা এবং অপরটি বিস্ফোরক আইনে।
কিন্তু ওই তদন্তেও আর্জেস গ্রেনেডের উৎস ও হামলার পরিকল্পনায় থাকা হোতাদের বিষয়ে কিছু উদঘাটন না হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে তৃতীয় দফা তদন্ত হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই তদন্ত শেষে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামাত নেতা আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং মামলাটিরই সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৩০ জনকে নতুন করে অভিযুক্ত করে দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি।
এভাবে অভিযোগ গঠন চূড়ান্ত করতেই লেগে যায় আট বছর। মামলায় মোট আসামি ৫২জনের মধ্যে মুফতি হান্নান, লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডয়ার জেনারেল আব্দুর রহিমসহ ২৫ জন কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের ফাঁসি হয়েছে। অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানেরও ফাঁসি কার্যকর হয়েছে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার মামলায়।
আর জামিনে আছেন ৮জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক, সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার খোদাবক্স চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বোনের ছেলে সাইফুল ইসলাম ডিউক।
অন্যদিকে এখনো পলাতক ১৯ জন আসামি। এর মধ্যে তারেক রহমান যেমন আছেন তেমনি এ তালিকায় খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সাংসদ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, জঙ্গি মওলানা তাজউদ্দীনের নামও রয়েছে। এদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান।
এরই মধ্যে মামলার ৫১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের জেরা শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলী জানালেন, শিগগিরই শেষ হতে যাচ্ছে এ মামলার বিচার কাজ।