পলাশী পাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির সূর্যের হাসি ক্লিনিকে চলছে অনিয়ম ।রোগীদের দুর্ভোগ
মেহেরপুর প্রতিনিধি : ইউএনএইচসিআর ও ইউকেএইচ এর অর্থায়নে পরিচালিত মেহেরপুরের গাংনী শহরের বাঁশবাড়িয়া পলাশী পাড়া সমাজ কল্যান সমিতির সূর্যের হাসি ক্লিনিকে চলছে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। ডেলিভারীসহ প্রতিটি বিভাগে বাড়তি টাকা আদায়ের কারণে দুরদুরান্ত থেকে আসা সাধারণ রোগীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। তাছাড়া ক্লিনিকে ২জন ডাক্তার থাকার নিয়ম থাকলেও সেখানে কর্মরত আছে একজন । তাকেও সঠিক সময়ে চেম্বারে পাওয়া যায় না । সেখানে ১জন ডাক্তার দিয়ে সেবা দেওয়া হয় । নার্স দিয়ে চলছে অপারেশনসহ ক্লিনিকের সব কাজ। অপারেশন থিয়েটারে নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। অপরিপক্ষ অদক্ষ টেকনিশিয়ান দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে সেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানটি। ক্লিনিক কর্তৃক যে ফার্মেসী রয়েছে সেখানেও চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। তাছাড়া রোগীদের জন্য নির্ধারিত এ্যাম্বুলেন্সটি রোগী পরিবহনের কাজে ব্যবহার হয়না। নিজ ডাক্তার ও অধিকাংশ সময় বাইরে ভাড়া দেওয়া হয়। এসব নানান সমস্যার কারণে এই সেবা মূলক প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিন সাধারণ রোগীদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি ও হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টার সময় ক্লিনিকে গিয়ে দেখে যায়, কোন রোগী নাই। তবে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় ,সূর্যের হাসি ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় অনেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ক্লিনিকে সেবার মান খারাপ হওয়ায় রোগীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ক্লিনিকটি প্রায় বন্ধের পথে । সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, এই ক্লিনিকে ডাক্তারের মধ্যে রয়েছে ডা. আব্দুল্লাহ ইয়ামিন পিয়াল । ডাক্তার নিয়মিত উপস্থিত থেকে রোগীদের সেবা দিয়ে আসলেও অন্যান্য কোন ডাক্তারকে চেম্বারে পাওয়া যায়না বলে অভিযোগ একাদিক রোগীদের। নির্ধারিত সিডিউলে ডিউটি করেন না তারা। ১০ শয্যার এ ক্লিনিকে ৬জন নার্স দিয়ে চলছে ডেলিভারী থেকে শুরু করে পুরো কার্যক্রম। কমিশনের আশায় ডেলিভারী রোগী আসলেই ভর্তির শুরুতে অপারেশন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে নার্স সহ সংশ্লিষ্ট সবাই। আর স্বাভাবিক ডেলিভারী হলেও রোগীর অভিভাবকদের ধরিয়ে দেওয়া হয় লম্বা একটি বিল। এতে রয়েছে নর্মাল ডেলিভারী চার্জ বাবদ এক হাজার ৭শ’ টাকা, ওটি চার্জ আটশ’ টাকা, নার্স, আয়ার বকশিস ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক বিল বাবদ ৮শ’পঞ্চাশ টাকা। নর্মাল ডেলিভারী রোগীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ টাকা নেওয়া হয়, তার ৩-৪ গুণ বেশী টাকা চার্জ করা হয় অপারেশন করা রোগীদের কাছ থেকে। যে কারণে গরীব-অসহায় রোগীরা সেবার বদলে প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী রোগীরা জানায়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত রোগীদের মধ্যে সাবিনা খাতুন নামের এক প্রসূতির স্বামী মনিরুল ইসলাম ,ও অন্যান্য নিহত প্রসূতির স্বামী মিজানুর রহমান জানান, যখন প্রসূতিরা প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে ঠিক ওই সময়ে একজন ডাক্তার পাওয়া যায়না। নার্সদের সিদ্ধান্তে চলে পুরো চিকিৎসা। তারা আরো বলেন, ইতো পূর্বে নার্সদের ভুল চিকিৎসায় আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।এছাড়াও উপজেলার করমদী,ঝোড়পাড়া, হাড়াভাঙ্গা,গাড়াডোব গ্রামে প্রায় ৬ জন শিশুসহ রোগী মারা গেছে। ডেলীভারী রোগী আসার সাথে সাথে অপারেশন করার জন্য চাপ দেয় নার্সরা। তাছাড়া বাঁশবাড়িয়া গ্রামের হতদরিদ্ররোগী রমেছা খাতুন জানান, বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যায়না। অভিযোগ উঠেছে, ক্লিনিকের নার্সদেরও সঠিক সময়ে পাওয়া যায়না। বকশিসের আশায় বসে থাকে তারা।ডাকলে বিরক্তি ভাব দেখায় অনেক সময় সাধারণ রোগী ও রোগীর অভিভাবকদের সাথে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করে।প্রসূতিদের সেবা নিশ্চিত করতে তাদের নিয়োজিত মাঠকর্মীরাও সঠিক দায়িত্ব পালন করেনা। নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, গর্ভবতীদের অপরেশনের মাধ্যমে ডেলিভারী করাতে পারলে প্রতিটি অপরেশনে ক্লিনিকের সংশ্লিষ্টরা কমিশন পায়। যা অ¯ী^কার করেছেন ক্লিনিক ব্যবস্থাপক । প্রতিবেদক ফোনের মাধ্যমে ক্লিনিকের বিভিন্ন অনিয়ম ও রোগীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় ইত্যাদি ব্যাপারে পলাশী পাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ম্যানেজার বদরুদ্দোজা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, গর্ভবতী অপারেশনের রোগীদের নিকট থেকে ৮হাজার ৮শ’ টাকা নেওয়া হয়। তবে নিয়ম অনুযায়ী টাকা নেওয়া হয়। অতিরিক্ত কোন টাকা নেওয়ার বিধান নেই । সবার নির্ধারিত বেতন রয়েছে। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আমি শুনেছি একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের কিছু জনবল সংকট রয়েছে। জনবল সংঙ্কটের কারণে সঠিকভাবে সেবা দিতে একটু কষ্ট হচ্ছে। তবে তিনি অনিয়মের সাথে জড়িত নন। অভিযোগ রয়েছে, ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধেও। দীর্ঘ দিন ধরে বহাল তবিয়তে থাকার সুবাদে তিনি গড়ে তুলেছেন একচ্ছত্র আধিপত্য। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে খুশি করার জন্য অতিরিক্ত বিল নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যে কারণে সেবার পরিবর্তে সাধারণ রোগীরা হয়রানীর শিকার হচ্ছে বলে জানা গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, ক্লিনিকের ডেলিভারী কক্ষগুলো খুব ছোট ছোট। চারিদিকে ময়লা আর্বজনা পড়ে রয়েছে। গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে রোগীদের। সিঁড়িতে প্রচুর ময়লা। নেই কোন ডাস্টবিন। এ ব্যাপারে ক্লিনিকের পিডি বিপ্লব হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বর্তমান ক্লিনিকের ভারপ্রাপ্ত পিডি আব্দুল বারির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে মোবাইলটি বন্ধ ছিলো।