রহস্যজনক কারণে আটকে আছে বাড়ি নির্মাণ
ছনি চৌধুরী,হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :
”ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ব্রিজের নিচে বসবাস, তাও আবার দীর্ঘ ১ যুগ ধরে। চোখ কপালে উঠবে যখন জানবেন তিনি জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি। নাগরিকদের সুবিধার দেখভাল করলেও নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই” এমন ”শিরোনামে” কয়েকমাস পূর্বে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সংবাদটি সারাদেশে ভাইরাল হয়ে পড়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সরকারের পক্ষ থেকে ভূমিহীন জনপ্রতিনিধিকে ১২শতক জয়গার ও ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে আনা হয় কয়েক লক্ষ টাকার অনুদান। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আজও তৈরি হয়নি জনপ্রতিনিধি রহিমা বেগমের বাড়ি। নতুন বাড়িতে বসবাস করার স্বপ্ন দেখলেও বসবাস করার সৌভাগ্য হয়নি রহিমা বেগমের স্বামী মকদ্দুছ মিয়া (৫৫) দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর এ বছরের (২৩জুন) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। স্বামী’র স্বপ্ন পূরণ হয়নি কিন্তু রহিমা বেগমের নতুন ঘরে বসবাস করার স্বপ্ন আদৌও সম্ভব হবে কি না এমন সংশয়ে দিন কাটছে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ২ বারের নির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্যা রহিমা বেগমের। শীত কি বর্ষায় কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই এই মহিলা মেম্বার ও তার পরিবারের লোকজনের। ফলে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্যস্ততম রাস্তা সৈয়দগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মনু খালের ব্রিজের নিচে বসবাস করে আসছেন তিনি। সারা দিন-রাত তাদের উপর দিয়ে চলাচল করে কয়েক হাজার যানবাহন। নুন আন্তে পান্তা ফুরায় তবে অভাব কখনই থামাতে পারেনি রহিমা বেগমকে। এলাকাবাসীর সুখে-দুঃখে সবার আগে ছুটে যান তিনি। এর প্রতিদান পেয়েছেন নির্বাচনে। মানুষের জন্য কাজ করার প্রত্যয়ে তিন বার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন রহিমা দুই বার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন এই জনপ্রতিনিধি। গত বছরের গত ২৮ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বনিদ্বতা করেন রহিমা। (মাইক প্রতীক) নিয়ে অপর দুই প্রার্থীর চেয়ে প্রায় ১ হাজার ৮শ’ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন রহিমা বেগম। নির্বাচনে জয়ী হলেও জীবন যুদ্ধে রহিমা বেগম পরাজিত এমন নির্মম কাহিনি লোকমুখে শুনে ভূমিহীন মহিলা ইউপি সদস্যের ব্রিজের নিচে বাড়িতে ছুটে যান স্থানীয় পত্র-পত্রিকার সংবাদ কর্মীরা। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ভূমিহীন ইউপি সদস্যকে এবছরের মার্চ মাসে ১২শতক খাস জায়গা বুঝিয়ে দেয়া হয়। বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হলেও রহস্যজনক কারণে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে না রহিমা বেগমের। একটি বিশ^স্থ সূত্রে জানা গেছে, ইউপি সদস্যা রহিমা বেগমের বাড়ি নির্মাণের জন্য কয়েকজন লন্ডন প্রবাসীর কাছ থেকে কয়েক লক্ষাধীক টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে একটি গর্তে এসে আটকে আছে টাকা। আদৌও কোনো সময় বাড়ি নির্মাণ করা হবে কী না এমন প্রশ্ন জনমনে। রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আউশকান্দি ইউনিয়নের সৈয়দগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মনু খালের ব্রিজের নিচে হাটু পনিতে বসবাস করছেন তিনি ঘরের ভিতরেও বাহিরে শুধু পানি আর পানি। প্রতিদিন পানি ভেঙ্গে যেতে হয় কর্মসংস্থান ইউনিয়ন কার্যালয়ে। মহিলা ইউপি সদস্যা রহিমা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল নতুন ঘরে উঠার কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না, সরকারের পক্ষ থেকে জায়গা পেলেও এখন পর্যন্ত বাড়ি নির্মান করা হয়নি। মহাসড়কে ব্রিজের নিচে থাকার ফলে গাড়ি শব্দে রাত্রে ঘুমাতে সমস্যা হয় কিনা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। পানির উপর ঘুমাচ্ছি সব সময় সাপ আতংক বিরাজ করে আমি বেচেঁ থাকতে হয়তো নতুন বাড়িতে উঠা হবেনা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার বলেন, রহিমা বেগমকে বরাদ্ধকৃত জায়গার উপর কিছুৃ অভিযোগ রয়েছে। আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা তা খতিয়ে দেখতে হয়। বাড়ী নির্মাণের জন্য টাকা সক্রান্তের কোন বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই।