টঙ্গীতে ৬ষ্ঠশ্রেনীর ছাত্রীকে হত্যা বস্তায় লাশ পাঁচারের অভিযোগে আটক(২)
গাজীপুরের টঙ্গীতে জমি-জমা সংক্রাস্ত ও পারিবারিক পূর্ব বিরোধের জের ধরে আপন চাচী ও চাচীর ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী মিলে ছবির স্টাইলে টঙ্গীর মুদাফা এলাকায় ২৫ আগষ্ট শুক্রবার সকাল ৯ টায় হাজী সৈয়দ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেনীর ছাত্রী সাবিনা আক্তারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। খবর পেয়ে টঙ্গী থানা পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে শাকিল মিয়া (২৬) ও শাকিলের স্ত্রী পান্না আক্তার (২৩) কে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর হত্যাকান্ডের লোমহর্ষ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এঘটনায় নিহতের বাবা ফিরোজ মিয়া বাদী হয়ে ৩ জনকে অভিযুক্ত করে টঙ্গী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত সাবিনার বাবা রাজমিস্ত্রি ফিরোজ মিয়া জানান, তিনি মুদাফা এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ আর তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম স্থানীয় একটি গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করেন। তাই বেশীর ভাগ সময় তাদের বাসার বাইরে থাকতে হয়। জায়গা জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জের ধরে বেশ কিছু দিন আগে তার ছোট ভাই ফিরোজের স্ত্রী আফসানা আক্তার ও আফসানার ভাই শাকিলের সাথে তার ঝগড়া হয়। তারপর থেকে তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী আফসানা বিভিন্ন সময় তার ভাইকে আমাদের বাড়িতে ডেকে এনে আমার মেয়ে হাজী সৈয়দ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেনীতে পড়–য়া সাবিনা আক্তারকে উত্যক্ত করতো। গত ২৫ আগষ্ট শুক্রবার সকাল ৯ টায় আমাদের অনুপস্থিতিতে বাসা থেকে সাবিনাকে তার ছোট চাচী আফসানা আক্তার (২৮), আফসানার ভাই শাকিল মিয়া (২৬) ও শাকিলের স্ত্রী পান্না আক্তার (২৩) মিলে শাকিলের ভাড়া বাসায় (মুদাফা হাজী ফারুকের বাড়ি) ডেকে নিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে ফিল্ম ষ্টাইলে কাঠের চেলা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে বলে গ্রেফতারকৃত শাকিল ও শাকিলের স্ত্রী পান্না পুলিশকে জানায়। গ্রেফতারকৃতরা পুলিশকে আরো জানায়, হত্যার পর সাবিনার লাশ গুম করতে শাকিল ও তার স্ত্রী মিলে লাশটি একটি সারের বস্তায় ভরে রিকশা যোগে টঙ্গীর চেরাগআলী বাসষ্টেশন নিয়ে আসে এবং তারা ময়মনসিংহগামী অজ্ঞাত একটি যাত্রীবাহী বাসের মালামাল বহনের বক্স্রে বস্তাভর্তি লাশটি উঠিয়ে দেয় এবং বড়বাড়ি বাসষ্টেশন গিয়ে তারা নেমে যায়। ঘটনার পর নিহতের বাবা ফিরোজ মিয়া তার মেয়েকে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে আফসানা আক্তার, শাকিল মিয়া, পান্না আক্তারকে অভিযুক্ত করে গত ২৭ আগষ্ট রোববার সকালে টঙ্গী থানায় এসে একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে টঙ্গী থানার এস আই মো: সিদ্দিকুর রহমানসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে অভিযুক্ত শাকিল মিয়া ও তার স্ত্রী পান্না আক্তারকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে হত্যাকারী শাকিল ও তার স্ত্রী পান্না উপরোক্ত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। এঘটনায় নিহতের বাবা ফিরোজ মিয়া বাদী হয়ে টঙ্গী থানায়-৩০২/২০১/১০৯/৩৪ দ:বি: ধারায়, মামলা নং-১০১ তারিখ-২৭.০৮.২০১৭ ইং, মামলা দায়ের করেন। গতকাল ২৮ আগষ্ট সোমবার মামলার তদন্তকারী এস আই মোশারফ হোসেন গ্রেফতারকৃতদের ১৬১ এবং ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধী নথিভূক্ত করতে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেছেন। তবে মামলার অপর অভিযুক্ত নিহতের চাচী আফসানা আক্তারকে পুলিশ এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি বা লাশ উদ্ধার করতে পারেনি বলে নিহতের বাবা জানান।
এব্যাপারে টঙ্গী থানার এস আই মোশারফ হোসেনের সাথে তার যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের আদালতে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রাথমিক কাজগুলো সেরে অভিযুক্ত অপরদেরও অবিলম্বে গ্রেফতার করা হবে। লাশ উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।