৪৭ বছর পর চালু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জ-গজারিয়া ফেরি সার্ভিস !
রুবেল মাদবর মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর থেকেই ৭ কিলোমিটার পথ ৭০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করে আসছে মুন্সিগঞ্জ-গজারিয়া নৌ রুটের যাত্রীরা। উত্তাল মেঘনা নদীর তীব্র ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই নৌ রুটে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার দিয়ে যাতায়াত করে আসছে প্রায় ৫ হাজার মানুষ।
দীর্ঘ দিনের দাবি এখন পূরণ হওয়ার পথে এই জেলার মানুষের। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা এই ফেরি সার্ভিসের কারণে পুরো জেলার উন্নতির পথকে বহু দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে এখন ১৫ দিনের মধ্যে মেঘনা নদীর উভয় প্রান্তে ফেরিঘাট স্থাপন সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সংশ্লিষ্টরা।
ফেরি চলাচলে যাতে বিঘ্ন দেখা না দেয় সে লক্ষ্যে গজারিয়া প্রান্তে ড্রেজিং কাজ শেষ হয়েছে, মুন্সিগঞ্জ প্রান্তে ড্রেজিং কাজ প্রক্রিয়াধীন। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসাবে পরিচিত গজারিয়ার সাথে মুন্সিগঞ্জের ফেরি সার্ভিসের কারণে মিলবন্ধন স্থাপন ছাড়াও বাড়বে দুই উপজেলার পারস্পরিক সম্পর্ক।
কলেজ ছাত্রী ইশরাত জাহান জানান, প্রতিদিন উত্তাল মেঘনার তীব্র ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার দিয়ে পারাপার হতে হয়। মুন্সিগঞ্জ-গজারিয়ার সঙ্গে নৌ রুটের দূরত্ব ৭ কিলোমিটার, কিন্তু সড়ক পথে যেতে ৭০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। এছাড়া সন্ধ্যার পর থেকে ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়।
গজারিয়া থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসে এই নৌ রুট দিয়ে।
মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই এই স্বল্প দূরত্বের নৌ রুট পারাপারের জন্য কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। এ ছাড়া গজারিয়ার সঙ্গে মুন্সিগঞ্জের সরাসরি ফেরি সার্ভিসের জন্য সংসদে এবং প্রধাণমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। দীর্ঘ দিনের এই দাবি এখন পূরণ হবার পথে। এ ছাড়া গজারিয়ার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক থেকে গজারিয়া ঘাট এবং মুন্সিগঞ্জ সদর থেকে নির্মাণাধীন চর কিশোরগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে এবং নির্বিঘ্ন চলাচল করতে আলোকসজ্জা করা হবে। দুই জেলার মাঝে সরাসরি ফেরি সার্ভিসের কারণে বাড়বে দুই উপজেলার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক।
সম্প্রতিকালে বিআইডব্লিউটিএ ফেরি সার্ভিসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে কাজ সাময়িক বন্ধ আছে, পানি কমে গেলে পুনরায় কাজ শুরু হবে।
বিআইডব্লিউটিএ-এর নারায়ণগঞ্জ বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হক মোল্লা জানান, গজারিয়া অংশের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। আকস্মিক মেঘনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অপর প্রান্তের চর কিশোরগঞ্জে কাজ সাময়িক বন্ধ আছে। ঈদের পরপরই কাজ শুরু হয়ে যাবে। ঘাট নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেলে বিআইডব্লিউটিসি-এর সঙ্গে কথা বলে তারা ফেরি চলাচল শুরু করবে।
গজারিয়া উপজেলার সড়ক যোগাযোগ চালু করার লক্ষ্যে মেঘনা নদীর উভয় প্রান্তে ফেরিঘাট স্থাপনের কাজ শুরু করা হয় গত জুলাইয়ে।
এখন মুন্সিগঞ্জ প্রান্তে চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় ফেরিঘাট স্থাপনের কাজ চলছে। ফেরিঘাট নির্মাণের সব কার্যক্রম শেষ হলেই দু’প্রান্তে পন্টুন স্থাপন করা হবে।