জঙ্গি আস্তানা থেকে দগ্ধ ৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার
রাজধানীর মিরপুর মাজার রোডের জঙ্গি আস্তানা থেকে দগ্ধ ৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে র্যাব।
বুধবার দুপুরে ব্রিফিংয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুফতি মাহমুদ খান জানান, ওই বাড়ি থেকে ৭ জনের দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মরদেহগুলো নারী না পুরুষের তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি। ঢাকা মেডিকেলে মরদেহ রাখা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে র্যাব জানিয়েছে, গতরাতে প্রচণ্ড আত্মঘাতী বিস্ফোরণে জঙ্গিরা মারা গেছেন তারা।
সেখানে আরো মৃতদেহ থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা— এর আগে, আজ সকালে সেখানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সর্ভিস ও র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের জানান, সকাল ৯টায় তারা অভিযান শুরু করেছে।
বোম ডিসপোজাল ও ডগ স্কোয়াড নিয়ে অভিযান শুরু হয়।
এর আগে ফায়ারর সার্ভিসের উপ পরিচালক দেবাশিস বর্ধন জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনে প্রবেশ করে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক ও র্যা ব মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।
এর আগে ওই বাড়িতে কয়েক দফা বিস্ফোরণ ঘটেছে জঙ্গিরা। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।
রাজধানীর মিরপুরের বর্ধনবাড়ি এলাকার আস্তানায় অবস্থান করা জঙ্গি আবদুল্লাহ র্যা বের আহ্বানে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েও শেষ পর্যন্ত মত পাল্টে ফেলে।
গতকাল রাতে আস্তানার ভেতর থেকে পর পর চার দফায় ভারি বিস্ফোরণও ঘটায়। কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। থেমে থেমে শোনা যায় গুলির শব্দ। বিস্ফোরণে ছয় তলা বাড়িটির পঞ্চমতলায় আগুন ধরে যায়। হঠাৎ বদলে যাওয়া এ পরিস্থিতিতে সেখানে অবস্থানকারী জঙ্গি আবদুল্লাহ, তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগীসহ সাতজনের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানা যায়নি।
মিরপুরের আস্তানায় অভিযান-সংশ্লিষ্টরা জানান, মঙ্গলবার সারাদিনই জঙ্গি আবদুল্লাহকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায় র্যা ব। মোবাইল ফোনের কথোপকথনের এক পর্যায়ে সহযোগী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আত্মসমর্পণে রাজিও হয়। সে অনুসারে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টা নাগাদ সবাই আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসে র্যা বের কাছে ধরা দেবে। ওই সময়েরও আধাঘণ্টা পর র্যা বের কাছ থেকে আরও কিছু সময় চেয়ে নেয় তারা।
রাত পৌনে ১০টার দিকে আস্তানা থেকে ভারী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মসমর্পণ না করার বিষয়টি জানান দেয় জঙ্গিরা। এ সময় র্যা ব সদস্যরাও গুলি ছোড়ে। ততক্ষণে ভেতরে থাকা জঙ্গি আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
গতকালের তথ্য:
রাজধানীর মিরপুর মাজাররোডে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা ভবনে থাকা জঙ্গি আবদুল্লাহসহ সাতজন আত্মসমর্পণের
রাজি হয়।
ভবনের ভিতর থেকে এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। জঙ্গি আবদুল্লাহ সময় চাওয়ায় এবং ভিতরে নারী ও শিশু থাকায় তাকে আত্মসমপর্ণের জন্য যথেষ্ট সময় দেয়ার পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয় বলে জানায় র্যা ব।
সকালেই ওই বাড়ি থেকে অন্য ফ্লাটের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয় র্যা ব সদস্যরা।
এর আগে বাড়ির ভেতর থেকে র্যা বকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ও পেট্রলবোমা ছোড়া হয় তবে কেউ হতাহত হয়নি।
র্যা বের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ছয় তলা ওই ভবনের পঞ্চম তলার আবদুল্লাহ নামের এক জঙ্গি অবস্থান করছে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় সোমবার রাতে এক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ‘জেএমবির জঙ্গি’ দুই ভাইকে আটক করার পর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মধ্য রাতে ঢাকায় এ অভিযান শুরু হয়।
মাজার রোডের পাশে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের দক্ষিণে বর্ধনবাড়ি ভাঙ্গা ওয়ালের গলির ২/৩-বি হোল্ডিংয়ে ছয়তলা ওই বাড়ির মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেও পরিবার নিয়ে ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকেন।
মুফতি মাহমুদ খান জানান, র্যা ব ওই বাড়ি ঘিরে ফেলার পর রাত ১টার দিকে সেখান থেকে চারটি বোমা ছোঁড়া হয়—তবে কেউ হতাহত হননি।
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সেখানে রাখা হয়েছে, ভোরের দিকে ওই গাড়ি থাকে ‘জঙ্গি আস্তার চারপাশে’ পানি ছিটানো হয়।
ঝুঁকি এড়াতে ওই ভবনের বিভিন্ন ইউনিট এবং পাশের বাড়িগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে স্থানীয় একটি স্কুলে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ভেতরে থাকা জঙ্গির নাম আবদুল্লাহ—যাদের সরিয়ে আনা হয়েছে তাদের মধ্যে আবদুল্লাহর এক বোনও আছে। আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় সেই বলেছে, যেন অন্যদের সঙ্গে তার বোনকেও সরিয়ে নেয়া হয়। আমরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। আবদুল্লাহকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হচ্ছে। সে জানিয়েছে, সে ভাবছে, সে সময় চেয়েছে।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ওই ভবনের ভেতরে আবদুল্লাহর সঙ্গে তার দুই স্ত্রী ও সন্তান মিলিয়ে অন্তত পাঁচ জন রয়েছে।