ঈদুল আজহার পর রাজশাহীর চামড়ার বাজারে হঠাৎ করেই অরাজকতা দেখা দিয়েছে।
স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এবার কোরবানিতে চামড়ার সরবরাহ ছিলো কম। এর ওপর নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু আড়তে গিয়ে দাম পেয়েছে প্রায় অর্ধেক। ফলে একদিনের ব্যবসায় অনেকে পথে বসেছেন। এজন্য তারা এখন ট্যানারি মালিকদেরই দুষছেন।
এদিকে পুঁজি সংকটের কারণে এবার পাড়া-মহল্লায় ঢুকতে পারেননি প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা। এতে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দাপটের কাছে নতি স্বীকার করে শেষ পর্যন্ত বেশি দামে চামড়া কিনতে হয়েছে প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীদের।
ফলে সংগৃহীত চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হবে বলে মনে করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। চামড়ার বাজারের এমন অবস্থার জন্য ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে টাকা না পাওয়াকেই দায়ী করলেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী নেতারা।
রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, চামড়া কেনার ক্ষেত্রে ঢাকার বাইরে সরকার নির্ধারিত দাম ছিলো লবণ মাখানো গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ছাগলের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২৫ টাকা। কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সেই নির্ধারিত দামে চামড়া কেনেনি। দাম তাদের ইচ্ছে মতো বাড়িয়েছে।
রাজশাহীতে যেখানে একটি বড় গরুর চামড়ার দাম সরকারি হিসেবে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা হয়, সেখানে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এক হাজার থেকে এক হাজার ২শ’ টাকায় চামড়া কিনেছে। এতো দাম দিয়ে চামড়া কিনে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই লোকসান ধরাশায়ী হয়েছেন তারা। বাদ যাচ্ছেন না প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও।
রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে গত দুই মৌসুমে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। এতো টাকা আটকে থাকার কারণে কমে গেছে তাদের পুঁজি। অল্প পুঁজি নিয়ে কোরবানির বাজারে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মতো প্রকৃত ব্যবসায়ীরা পাড়া-মহল্লায় ঢুকতে পারেনি। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চামড়াও কিনতে পারেনি।
এখন ব্যবসার খাতিরে বাধ্য হয়ে তাদের কাছ থেকেই চামড়া কিনতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত দামের কিছুটা বেশি দিতে হচ্ছে। এতে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও লাভে নেই।
তিনি বলেন, চারদিকে বন্যা পরিস্থিতির কারণে রাজশাহীতে পশু কোরবানি এবার কম হয়েছে। রাজশাহীতে প্রতি কোরবানি ঈদে ৮০ থেকে ৯০ হাজার গরু-মহিষ এবং প্রায় দেড় লাখ থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার ছাগল-ভেড়া কোরবানি হয়ে থাকে। কিন্তু এবার এর সংখ্যাটা গরু-মহিষের ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ৬০ হাজার এবং ছাগল-ভেড়ার ক্ষেত্রে এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজারে নেমে এসেছে।
পশুর সংখ্যা কমে যাওয়ায় মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতা করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের চামড়া কিনতে হয়েছে। চামড়া না কিনে উপায়ও ছিলো না। কারণ এবার চামড়া দিতে না পারলে ট্যানারি মালিকদের কাছে আটকে থাকা বকেয়া টাকা উদ্ধারও করা যাবে না। ফলে বাধ্য হয়ে বেশি দামে চামড়া কিনতে হয়েছে বলেও জানান চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের এ সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে নগরীর সিরোইল কালোনি এলাকার নাজির উদ্দিন নামের এক মৌসুমী ব্যবসায়ী বলেন, ৪২ হাজার টাকা ধার করে চামড়া কিনেছিলেন। ছাগলের চামড়া ৫০ টাকা ও ২০টি গরুর চামড়া ১ হাজার ২শ’ টাকা দরে। পরে চামড়া বিক্রি করে তার লোকসান হয়েছে ৩ হাজার ৮শ’ টাকা।
এমন করে তার মতো যারা ঋণ করে চামড়া ব্যবসা করেছেন তারা ধরা খেয়েছেন বলে জানান নাজির উদ্দিন।