প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই, অন্যায় মেনে নিতে পারি না
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার যতক্ষণ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে না নেবে ততক্ষণ তাদের আশ্রয়-সহায়তা করবে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, কোনো অন্যায় আমরা মেনে নিতে পারি না। মানবিক দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। মিয়ানমার সরকারকে সেদেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে হবে— ফিরিয়ে দিতে হবে নাগরিক অধিকার।
এ অত্যাচার বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শান্তি চায়, সুসম্পর্ক চায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে।
রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, প্রতিবেশি হিসেবে মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ।
রিলিফ কমিটির নামে কেউ যেন নিজেদের ভাগ্য না গড়তে পারে সেদিকেও নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখভালের জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও নির্দেশনা দেন তিনি।
পরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পর্যায়ক্রমে ক্যাম্পের সব শরণার্থীর কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়।
এর আগে সকাল ১০টার পর প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ১৯০৯ ফ্লাইটটি কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
মিয়ানমারের সেনা ও পুলিশের হাতে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে কক্সবাজারে যান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, চিফ হুইপ আসম ফিরোজ, হুইপ ইকবালুর রহিমসহ আরো অনেকে।
জানা গেছে, উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর সার্কিট হাউজে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বিকেলেই ঢাকা ফিরবেন তিনি।
উল্লেখ্য. গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের কয়েকটি তল্লাশি চৌকিতে উগ্রবাদীদের হামলার অভিযোগ তুলে রাখাইন রাজ্যে দমন অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশ। মুসলিমদের ওপর নির্যাতন, জুলুম, নিপীড়ন, ঘরবাড়িতে আগুন, মানুষ হত্যা অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা। তাদের নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকের আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই হলেও অনেকেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
গত রোববার বিকেলে রোহিঙ্গা ইস্যুকে একটি ‘জাতীয় সমস্যা’ হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা আগে থেকেই বাংলাদেশে ছিল। আর গত মাসের ঘটনার পর বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে আরো তিন লাখ রোহিঙ্গা। নতুন তিন লাখ রোহিঙ্গাসহ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার থেকে নতুন করে আসা লোকজনের জন্য প্রাথমিকভাবে আশ্রয়, মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার ওপর বাংলাদেশ জোর দিচ্ছে।