যারা মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও বৈশ্বিক বিষয়গুলো বেশ গুছিয়ে নিয়েছে মিয়ানমার।
সে সময় থেকেই দেশটির রাজনীতি ও বৈদেশিক নীতিতে প্রভাব খাটিয়েছে সেনাবাহিনী।
অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বেশ শক্ত হাতে দেশটি শাসন করে সেনাবাহিনী। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিক থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে মিয়ানমারের ওপর।
২০১২ সালে দেশটি তথাকথিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থায় যাত্রা শুরু করলে এসব নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে শুরু করে, যদিও মিয়ানমারে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রফতানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপ করা একটি নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল রয়েছে।
স্টকহ্যাম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যের বরাত দিয়ে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রফতানি নিষিদ্ধ থাকলেও গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যুদ্ধবিমান, সাজোয়া যান, যুদ্ধজাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র বা মিসাইল ও কামানসহ প্রচুর অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কেনে মিয়ানমার। আর এসব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের বেশিরভাগই তারা কিনেছে চীন, রাশিয়া, ভারত, ইসরায়েল ও ইউক্রেনের কাছ থেকে।
যুদ্ধবিমান
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মিয়ানমার ২৬৪টি যুদ্ধ বিমান কেনে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২০টি যুদ্ধবিমান তারা কেনে চীন থেকে। রাশিয়া থেকে কেনে ৬৪টি। এছাড়া পোল্যান্ড থেকে ৩৫টি, জার্মানি থেকে ২০টি, সাবেক যুগোস্লাভিয়া থেকে ১২টি, ভারতের কাছ থেকে ৯টি, সুইজারল্যান্ড থেকে ৩টি ও ডেনমার্ক থেকে একটি যুদ্ধবিমান কেনে তারা। এখানে উল্লেখ্য, মিয়ানমারে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রফতানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগেই পোল্যান্ড ও জার্মানি দেশটির কাছে যুদ্ধবিমান বিক্রি করেছিল।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি কামান
সাজোয়া যান
যুদ্ধবিমানের মতো সাজোয়া যানও মিয়ানমার সবচেয়ে বেশি কিনেছে প্রতিবেশী চীনের কাছ থেকে। অন্য দেশগুলোর মধ্যে ইসায়েল থেকে ১২০টি, ইউক্রেন থেকে ৫০টি ও ভারতের কাছ থেকে ২০টি সাজোয়া যান কেনে মিয়ানমার।
যুদ্ধজাহাজ
মিয়ানমার নৌবাহিনীর বহরে থাকা যুদ্ধজাহাজগুলোর মধ্যে সবেচেয় বেশি ২১টি তারা কিনেছে চীনের কাছ থেকে। এছাড়া ভারত ও সাবেক যুগোস্লাভিয়ার কাছ থেকে কিনেছে ৩টি করে যুদ্ধজাহাজ।
কামান
গত দুই যুগেরও বেশি সময়ে মিয়ানমার তাদের কামানের সংখ্যাও বাড়িয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কেনা কামানগুলোর মধ্যে চীনের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১২৫টি, সার্বিয়ার কাছ থেকে ১২০টি, রাশিয়ার কাছ থেকে ১০০টি, ইসরায়েলের কাছ থেকে ২১টি, উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে ১৬ ও প্রতিবেশী ভারতের কাছ থেকে ১০ কামান কেনে তারা।
ক্ষেপণাস্ত্র
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে গত বছর পর্যন্ত নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র বা মিসাইলের সংগ্রহশালাও বেশি বাড়িয়েছে মিয়ানমার। এ সময়ে তারা সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৯৭১টি ক্ষেপণাস্ত্র কেনে রাশিয়ার কাছ থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৯টি ক্ষেপণাস্ত্র তারা কেনে চীনের কাছ থেকে। এছাড়া বেলারুশের কাছ থেকে ১০২টি, বুলগেরিয়ার কাছ খেকে ১০০টি ও ইউক্রেনের কাছ থেকে ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র কেনে মিয়ানমার।