টাঙ্গাইলে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতার অব্যাহতি
অন্তু দাস হৃদয়, টাঙ্গাইল :
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সেলিম মিয়া ওরফে শেখ সোয়েবের বিরুদ্ধে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগসহ অনৈতিক কার্যকলাপ ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগ।
রবিবার দুপুরে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের নির্দেশে সংগঠনের উপজেলা শাখার জরুরী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
দেলদুয়ার উপজেলার ছাত্রলীগ সভাপতি মাসুদ রানা অব্যাহতির বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, আটিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সেলিম মিয়া ওরফে শেখ সোয়েবের বিরুদ্ধে নারী ধর্ষণসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ অসত্য প্রমাণ করতে পারলে জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগ ইচ্ছে করলে তাকে আবার দলে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। অভিযোগ প্রমাণ হলে দলে ফেরার কোন সুযোগ নেই।
এ ধরনের কাজে লিপ্ত থাকা নেতাকর্মীদের স্থান ছাত্রলীগে নেই বলে জানান এই ছাত্রলীগ নেতা।
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে ধর্ষিতা ওই নারী সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওই নারী বলেন, ৮ সেপ্টেম্বর সোয়েব ও তার এক সহযোগী শিপন তাকে আশেকপুর গোডাউন ব্রিজ সংলগ্ন বাসায় ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।
এ সময় তার চিৎকারে হাত ও মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে সোয়েব। আর এই ধর্ষণের ভিডিওচিত্র শিপন তার মোবাইলে ধারণ করে।
পরে, তারা চলে যাওয়ার সময় ধর্ষণের বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য হুমকি দেয়। তা নাহলে ধর্ষণের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে জানায়।
পরে, ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ওই ধর্ষিতা। গত (১১ সেপ্টেম্বর) টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্রæনাল আদালতে ধর্ষিতা বাদী হয়ে মো. সেলিম মিয়াকে প্রধান আসামি ও বন্ধু মো. রিয়াজ ওরফে শেখ শিপনকে আসামি করে মামলা করেন।
পরে, আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
এ দিকে ছাত্রলীগ নেতা সোয়েব মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবি করে শুক্রবার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
তার অভিযোগ, তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। এমন কি রাজনৈতিকভাবে হেয় করা হচ্ছে।
সোয়েব জানান, ২০১৬ সালে দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া মাজার প্রাঙ্গণে একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ওই মেলা পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ওই মেলায় সাত দিন হোটেল ব্যবসা করার জন্য একটি দোকান নেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আশেকপুরের ওই নারী। মেলায় দোকান করার সুবাদে সে সময় তার সাথে পরিচয় হয়।
তবে, সেটা ছিল মেলা কর্তৃপক্ষ আর ব্যবসায়িক সম্পর্কের। এই মেলায় হোটেল করার সময় ওই নারী স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বাকিতে নেয়। সেই পাওনা টাকা পরিশোধ না করে মেলায় মাত্র চার দিন দোকান করে পালিয়ে যায়।
মেলা পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে থাকার ফলে ওই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ওই নারীর কাছে পাওনা টাকা আদায় করে দেয়ার জন্য বিচার নিয়ে আসেন। তাদের পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য আমি ওই নারীকে চাপ দেই।
এ নিয়ে আমার সাথে ওই নারীর কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। আমি যাতে ওই নারীকে পাওনা টাকার জন্য আর চাপ দিতে না পারি, সে জন্য ও আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে ওই নারী আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছেন।