কালীগঞ্জে হা-মী-ম গ্রুপের শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ্য
ষ্টাফ রিপোর্টারঃ গাজীপুরের কালীগঞ্জে অবস্থিত হা-মী-ম গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রিফাত গার্মেন্টস্ এর প্রায় শতাধিক শ্রমিক আকস্মিক ভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার প্রতিদিনের মতো সকাল ৮টায় শ্রমিকরা কাজে যোগদান করে। ৯টায় সুইং, ফিনিসিং ও প্রশিক্ষণ বিভাগের শ্রমিকরা একের পর এক জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়তে থাকে। এসময় সহকর্মীরা অসুস্থ্য শ্রমিক মল্লিকা, বৃষ্টি, হাজেরা, ইতি, রুপালী, খাদিজা, রিনা, বিলকিস, নার্গিস, রাকিব, সালমা, আমেনা, রীতা, পারভীন বেগম, জোহরা, রোকেয়া, ইয়াসমিন, জেসমিন, সুমি, নিলুফা, শিরিন, পারভিন আক্তারকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এসময় হাসপাতালে অসুস্থ্য শ্রমিক ও তাদের স্বজনদের আহাজারীতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানায়, গত সোমবার জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার মৃত লুৎফর রহমানের পুত্র সুইং সেকশনে সুপারভাইজার মকবুল হোসেন (৩৫) কর্মরত অবস্থায় আকস্মিক ভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এসময় কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান। মঙ্গলবার সকালে কাজে যোগদানের পর মকবুলের মৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষ আমাদের একটি ফ্লোরে একত্রিত করে। এসময় পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব, দূর্গন্ধ ও কারখানার ভিতরে রাখা পানি পান করে প্রায় শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য রিক্সা, ভ্যান, ইজিবাইক, সিএনজি ও লেগুনায় করে বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে নিয়ে যাই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত বেডের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক শ্রমিককে ফ্লোরে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
তারা আরো জানায়, প্রতিষ্ঠানের সহকারী এডমিন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, শ্রমিক কল্যাণ কর্মকর্তা কামরুন নাহার সুইটি ও ষ্টোর কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ্য শ্রমিকদের সুস্থ্য হওয়ার পূর্বেই হাসপাতাল ত্যাগ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। তাদের ভয়ে অনেকে সামান্য চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করলেও পুনরায় অসুস্থ্য অবস্থায় হাসপাতালে ফিরে আসে।
বেলা ১১টায় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ জামিল আহম্মেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুঃ মুশফিকুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ দত্ত, পৌর মেয়র লুৎফর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ সোহাগ হোসেন, উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ফরহাদ হোসাইন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলম চাঁদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শণ করে রোগীদের চিকিৎসার খেঁাঁজ খবর নেন।
রিফাত গার্মেন্টস্রে নির্বাহী পরিচালক মেজর (অবঃ) মনিরুজ্জামান চৌধুরী জানান, শ্রমিকরা সকালে না খেয়ে কারখানায় এসে ১০টা-১১টায় নাস্তা করে। সুপাইরভাইজার মৃত্যুর ঘটনায় শ্রমিকদের ফ্লোরে একত্রিত করা হয়। এসময় একজন শ্রমিক চিৎকার করে উঠলে অন্য শ্রমিকরাও চিৎকার চেচামিচি শুরু করে। ক্ষুধা, নতুন কর্মস্থল, ভয় ও আতঙ্কে শ্রমিকরা অসুস্থ্য হয়ে পড়লে সকল শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দেই। এ ঘটনায় ভিতরের কারো ইন্ধন আছে বলে আমি মনে করি।
কালীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ইউসুফ আলী জানান, কারখানায় শ্রমিকদের জরুরী প্রয়োজনে চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই। এম্বুল্যান্স ও চিকিৎসার অভাবে সোমবার একজন শ্রমিক মারা যায়।
জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ শারমীন জোয়ার্দার জানান, সকাল থেকেই হঠাৎ করে একের পর এক হামীম গ্রুপের রোগী আসতে থাকে। তাদের বেশীর ভাগই মাস সাইকোজেনিক ইলনেস বা ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ছিল।
কালীগঞ্জ-কাপাসিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ দত্ত জানান, শ্রমিকরা অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তাদের আত্মীয় স্বজন এবং স্থানীয়রা হাসপাতালে ভিড় জমালে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোঃ ছাদেকুর রহমান আকন্দ জানান, অসুস্থ্য শ্রমিকরা হাসপাতালে এলে আমরা তাদেরকে সাধ্যমত চিকিৎসা প্রদান করি। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৬৪জন শ্রমিক অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ৫৩জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই, ৭জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করি এবং ৪জন শ্রমিক ভর্তি আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুঃ মুশফিকুর রহমান জানান, শ্রমিক অসুস্থ্য হওয়ার ঘটনায় হাসপাতাল ও কারখানা পরিদর্শণ করেছি। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।