সুষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত না থাকায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার ফেরি
মো. রুবেল মাদবর
মুক্তারপুর ফেরি ঘাট এখন ইতিহাস। ধলেশ্বরী নদীর বুক চিরে এখন বিশাল সেতু। ৯ বছর ফেরি চলাচল না থাকায় সে সময়ের ব্যবহৃত ফেরি, জেটি, ইঞ্জিন, পন্টুনগুলো পড়ে আছে অযতœ-অবহেলায়। নদীর ¯্রােতোধারা এখন অনেক সঙ্কীর্ণ। ছোট ছোট ফেরির বেশির ভাগই আজ নদী তীরের কাদামাটিতে নিমজ্জিত। এই মূল্যবান সরকারি সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার যেন কেউ নেই!
জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগ জানায়, নারায়নগঞ্জ-ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ শহর যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে ফেরি পারাপারের পরিবর্তে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও চায়না রোড এন্ড ব্রীজ কর্পোরেশন (সিআরবিসি) চীনের তত্তাবধানে ২০৮.৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী ‘মুক্তারপুর’ সেতু। সেতুটি তৈরি করতে বাংলাদেশের মোট ব্যয় হয় ৭৯.১৫ কোটি টাকা। সেতুটি ১৫১ মিটার দৈঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থ নিয়ে মুক্তারপুর ধলেশ^রী নদীর উপর নির্মিত হয়।
২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে এই সেতুর উদ্ধোধন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্রপতি ফখরুউদ্দীন আহম্মেদ।
সেতুটি উদ্ধোধন করার পর থেকে মুক্তারপুর টু চর মুক্তারপুর ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে সে সময়ের ব্যবহৃত ফেরি, জেটি, ইঞ্জিন, পন্টুনগুলো অবহেলায়-অযতেœ পড়ে আছে এ ঘাটে। যা দেখার মতো কেউ নেই। নজহীন ভূমিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। দীর্ঘ ৯ বছরেও এই মূল্যবান সরকারি সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেনি সকড় ও জনপদ বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফেরিগুলো চরমুক্তারপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ফেরি ঘাট এলাকায় সেতুর নিচে বিভিন্ন স্থানে অবহেলা ও অযতেœ পড়ে আছে সে সময়ের ব্যবহৃত জেটি, ইঞ্জিন, পন্টুনসহ ১০টি ফেরি। এর মধ্যে ৫টি ফেরি আর বাকি ৫টি জেটি, পন্টুন এবং ইঞ্জিল রয়েছে। এছাড়াও পানির নিচে ডুবে আছে আরো তিনটি ফেরি। ফেরির নীচের অংশে মরিচা পড়েছে। কতগুলো আবার কাদার নিচে নিমজ্জিত হয়ে আছে। পন্টুন তিনটির কোনো কোনো অংশ কেউ খুলে নিয়ে গেছে। যা পড়ে আছে তা অবহেলায় পড়ে আছে পানির নিচে।
চর মুক্তারপুর ফেরি ঘাট এলাকার স্থানীয় এক গৃহবধূ রাবেয়া বেগম (৩৫) বলেন, ২০০৮ সালে ধলেশ^রী নদীর উপর মুক্তারপুর সেতু নির্মাণের পর থেকে কোনো ফেরি আর চলাচল করে না এই ঘাটে। ফেরি ও পন্টুরনগুলো অনেক দিন ধরে এখানে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। অনেকগুলো ফেরি কাদামাটিতে নিমজ্জিত। আর তিনটির মতো ফেরি কাদামাটিতে বিলিন হয়ে গেছে। সরকারি সম্পদ এক দিকে যেমন ক্ষতি হচ্ছে অপর দিকে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ। সরকারের কর্তৃপক্ষ এগুলো সরিয়ে নিলে এক দিকে যেমন ঘাটের পরিবেশটা সুন্দর হবে। অন্যদিকে সরকারি সম্পদ বিনষ্ট থেকে রক্ষা পাবে।
ফেরি চলাকালিন সময়ে কর্মরত মো. তুহিন সরকার বলেন, মুক্তারপুর সেতু হওয়ার পর থেকে তৎকালিন সময়ে ৫টি ফেরি ছিল। ৯ বছর ফেরি চলাচল না থাকায় সে সময়ের ব্যবহৃত ফেরি, পন্টুন, জেটি, এবং ইঞ্জিন পড়ে আছে অবহেলায় ও অযতেœ। যা দেখার মতো কেউ নেই। এছাড়াও এখানে যে ফেরিগুলো পরে আছে এর সবগুলো কিন্তু মুক্তারপুরের ফেরি নয়। এগুলো বিভিন্ন জেলা থেকে এনে মুক্তারপুর সেতুর নিচে বিভিন্ন স্থানে রেখেছে ফেরি কর্তৃপক্ষ।
মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুনুর রশীদ বলেন, আমিও যাওয়ার সময় দেখি ফেরিগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এতে আমাদের কিছু করার নাই। সকড় ও জনপদের দুটি বিভাগ আছে। একটি হচ্ছে সিভিল আর অন্যটি মেকানিক্যাল। এই মেকানিক্যালের অন্তরভুক্ত হলো যত ধররেরে ফেরি পন্টুন, জেটি এবং রোলার। এটা আমাদের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের অন্তরভুক্ত নয়। তাই এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছিনা।
তিনি আরো জানান, তেজগাঁও এ মেকানিক্যাল সড়ক ও জনপদের সার্কেল অফিস এ ফেরি সম্পর্কে সক কিছু বলতে পারবে। যে তাদের ফেরি নিয়ে কি পরিল্পনা। তারা এগুলোকে কি করবে। এগুলোকে কোথায় কাজে লাগাবে।
সরকারি সম্পদগুলো এভাবে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে পড়ে আছে অযতেœ-অবহেলায় মুক্তারপুর ফেরি ঘাট এলাকায়। এই সরকারি সম্পদের সঠিক রক্ষাণাবেক্ষণ করে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চত করতে সরকার ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি কামনা করছে এ জেলার সচেতন মানুষ।