নিসর্গ পল্লীতে মিশে আছেন ড. মাহমুদ হাসান ফটিকছড়ির দৃষ্টিনন্দন কবরস্থান
এম.রফিকুল ইসাম(চট্টগ্রাম) : বিস্তীর্ণ মাঠ, পুরো মাঠজুড়ে সবুজের সমাহার। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফল গাছে পরিপূর্ণ মাঠটি। পুরো মাঠটি যেন সবুজের চাদরে তৈরী কার্পেট। দর্শণার্থীদের সুবিধার্থে মাঠে বসানো হয়েছে টুকরো টুকরো পাথর। বলতে গেলে সবুজের কার্পেট টুকরো টুকরো ইট-পাথরের ছোঁয়াও পড়েছে, সারি সারি গাছ। প্রতিটি গাছ স্বমহিমায় বেড়ে উঠছে আর সৌন্দর্য বাড়াচ্ছে এ মাঠটির। ছোট ছোট নানা প্রজাতির ফুল গাছে ইতিপূর্বে ফুটেছে ফুল। ফুলের বাহার যেমন মন কেড়ে নেয়, তেমনই ফুলের সুগন্ধে মন ভরে যায়। মাঠের চার পাশে রয়েছে ফলজ, বনজ সহ নানা ধরনের উপকারী গাছপালা, চারপাশে নির্মাণ করা হয়েছে সীমানা প্রাচীর। সীমানা প্রাচীরে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে করা হয়েছে আধুনিক ও আকর্ষণীয় কারুকাজ। কবরস্থানটির অপ্রয়োজনীয় ঘাস কাটার জন্য মালয়েশিয়া থেকে আনা হয়েছে অত্যাধুনিক মেশিন। মাঠজুড়ে বসানো হয়েছে পানি সরবাহের যন্ত্রপতি, যে যন্ত্রপতি দিয়ে পুরো মাঠে কৃক্রিম উপায়ে অবিকল বৃষ্টি ঝরবে। মাঠের মাটির নিচে সৌরবিদ্যুতের আলোকধারা স্থাপন করা হয়েছে। সূর্যের কিরণে এ প্রকৃতির মাঠ ঝলমল করে। আবার আধার রাতে আলোকসজ্জায় আলোকিত হয়ে উঠে এ জায়গাটি। সেখানে ঢুকার জন্য রয়েছে দক্ষিণমুখী বিরাট তোরণ। এটি নিসর্গ পল্লীর চিত্র। জমি সহ সবমিলিয়ে অন্ততঃ ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এ নিসর্গ পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে। দেশের মানচিত্রে কোন জায়গার নাম নিসর্গ পল্লী আছে কিনা জানা নেই। নিসর্গের প্রতিশব্দ হলো প্রকৃতি। আর পল্লী শব্দের অর্থ গ্রাম। নিসর্গ পল্লী মূলত, এখান থেকেই সৃষ্ট। এটি কোন গল্পকাহিনী নয়। গল্পের প্রয়োজনে এ ‘নিসর্গ পল্লী’এর নামকরণ করা হয়নি। ফটিকছড়ির মানচিত্রেই এ নিসর্গ পল্লীর অস্তিত্ব রয়েছে। ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী রহমত বাড়ীর চার দেয়ালে আবদ্ধ একটি মাঠকে কেন্দ্র করে এ নিসর্গ পল্লীর অবস্থান। এ মাঠ খেলার মাঠ নয়, এ মাঠ বিনোদন কেন্দ্রও নয়। এ মাঠ একটি আবেঘের জায়গা, ভালোবাসার জায়গা। এ মাঠের ঠিক মাঝখানে চিরনিদ্রায় শায়িত ড. মাহমুদ হাসান। যিনি ছিলেন বৃহত্তর ফটিকছড়ির গণমানুষের নেতা। ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য ও দানবীর। তিনি যে মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন সেটা তাঁর সমাধিস্থলে গেলে জলের মত পরিষ্কার হয়ে যায়। তাঁর সমাধিস্থলের চার পাশে কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন সীমানা প্রাচীর ও নার্সারীর কাজ করা হলেও সমাধিটি রাখা হয়েছে প্রকৃতির চাদরে ঢাকা। ড. মাহমুদ হাসানের সমাধির কোথাও ইট, সিমেন্ট, বালুর ছোঁয়া লাগানো হয়নি। পুরো সমাধিটিকে সবুজ ঘাস আর ফুল গাছ আলিঙ্গন করে আছে। জীবনের বাকী সময়গুলো সবুজকে ভালোবেসে, প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করে, মাটির সাথে মিশে কাটিয়ে দিবেন ড. মাহমুদ হাসান। যেন নিসর্গেই মিশে আছেন ড. মাহমুদ হাসান। মাটিকে ভালোবেসে, মাটির মানুষ হওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তিনি যে মাটি ও মানুষের নেতা হতে পেরেছেন সেটা তাঁর বিদায়লগ্নে প্রমাণ হয়েছে। ধনে- জ্ঞানে, উচ্চতায়- চেহারায় একজন পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন তিনি। জীবনের শেষবেলা পর্যন্ত তিনি ছিলেন একজন ধণার্ঢ্য শিল্পপতি। দেশ ছাড়িয়ে তাঁর স্বনাম ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বজুড়ে। সংগ্রাম করে নিজের অবস্থান সংহত করা এ মানুষটি বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিকই কেবল ছিলেন না, ছিলেন এ অঞ্চলের একজন অপ্রতিরুদ্ধ দানবীর। এরপরও নিজেকে কখনো আলাদাভাবে ভাবতেন না তিনি। নিজেকে ভাবতেন একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে। তাঁর সেই ভাবনা চিন্তা- চেতনার পরিসরে সীমাবদ্ধ ছিল না, আজ সেই ভাবনাটা পরিপূর্ণতা পেয়েছে। তিনি জীবনের বাকী সময়গুলো যেখানে, যেভাবে কাটাতে চেয়েছিলেন আজ সেইভাবেই কাটাচ্ছেন। চায়লে তাঁর সমাধিটি মার্বেল পাথর আর লোহা- স্টিল দিয়ে সাজাঁনো যেত। কৃক্রিমভাবে করা যেত অনেক কারুকাজ। দর্শণার্থী কিংবা তাঁর ভক্ত-সমর্থকরা হয়ত তখনো এ সমাধিস্থলে যেতেন, জেয়ারত করতেন। কিন্তু এই যে স্বস্তির নিশ্বাস সেখানে ফেলছেন, সেটা হয়ত তখন ফেলানো সম্ভবতর হত না। ফুলের ঘ্রাণ, পাখির কিচিমিচি ডাক আর প্রকৃতির সবুজের চাদর দেখা যেত না। নিসর্গ পল্লীর তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, মরহুম ড. মাহমুদ হাসানের কর্মী-সমর্থক সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন অনেকে মানুষ মনোমুগ্ধকর এ কবরস্থানে জেয়ারতের উদ্দেশ্যে আসেন। নিসর্গ পল্লীর নামকরণ করেন মরহুমের প্রাক্তন ব্যক্তিগত সহকারী ও ড. মাহমুদ হাসান ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র আহমেদ এরশাদ খোকন। তিনি বলেন, ড. মাহমুদ হাসান প্রকৃতিকে ভালোবাসতেন, কৃত্রিম যেকোন কিছু এড়িয়ে চলতেন। তাঁর সেই ভালোলাগা প্রকৃতিই এখন তাঁকে আলিঙ্গন করে আছে। মরহুমের জেষ্ঠ পুত্র, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আখতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজ এ কবরস্থানের মূল নকশা তৈরী করেন। তিনি বলেন, আমার বাবার সমাধি যেমন হওয়ার তেমনই হয়েছে।