রোহিঙ্গাদের জন্য সেফজোনের উদ্যোগ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান, অর্থমন্ত্রীর
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য মিয়ানমারে একটি সেফজোন প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এদিকে, মিয়ানমারে দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জাতিসংঘ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বিশ্বসংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন গুতেরেস।
এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তার আশ্বাস দিয়ে মহাসচিব বলেন, সংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় সব কিছু করছে জাতিসংঘ।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্র সফররত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে এক সাক্ষাতে জাতিসংঘ মহাসচিব একথা জানান বলে জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সাক্ষাতে রোহিঙ্গা সঙ্কটের ঘটনায় আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, বিষয়টির ওপর জাতিসংঘের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ রয়েছে। অনেক জনসংখ্যার দেশ হয়েও বাংলাদেশ এই বিশাল রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দীর্ঘদিন ধরে মানবিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে, এটি আমাকে মুগ্ধ করছে।
এ সময় রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীকে জানিয়ে আন্তোনিও গুতেরেস এ বিষয়ে তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার নিশ্চয়তা দেন।
গত মাসে জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনের হাই লেভেল সপ্তাহে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার আলাপচারিতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সাক্ষাতে অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ অনুযায়ী একটি ‘সেইফ জোন’ গঠনসহ রোহিঙ্গা সঙ্কটের দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবকে যতদ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ সফরের আহ্বানও জানান তিনি।
সাক্ষাতে জাতিসংঘ সংস্কার কার্যক্রম ও দারিদ্র্য বিমোচনসহ এসডিজির বিভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।
অর্থমন্ত্রী পর্যায়ক্রমে জাতিসংঘের সংস্কার বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়ে এটি যেন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অগ্রগতি ও উত্তরণের ক্ষেত্রে সহায়ক হয় তা নিশ্চিত করার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ করেন।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মহাসচিবের কার্যালয়ে এ সাক্ষাতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিউল আজম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম ও বাংলাদেশ মিশনের ইকোনমিক মিনিস্টার ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুনসহ ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
সাক্ষাতের শুরুতে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে স্বাগত মহাসচিব গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
এসডিজি বাস্তবায়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা তৈরিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সফলতার প্রশংসা করেন তিনি।
একই দিন বিকালে অর্থমন্ত্রী ইউএনডিপি সদর দপ্তরে ইউএনডিপির প্রশাসক আহখিম স্টেইনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাতে রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশের মানবিক সহযোগিতার প্রশংসা করেন ইউএনডিপির প্রশাসক। বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নসহ উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে ইউএনডিপির সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে অর্থমন্ত্রীকে বলেন তিনি।
এর আগে অর্থমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফেকিতামইলোয়া কাতোয়া উতোইকামানুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশসমূহের পরবর্তী ধাপে উত্তরণের বিষয়সমূহ প্রাধান্য পায়।