সোনিয়ার আত্মহনন অবশেষে মিডিয়ার চাপে মামলা নিতে বাধ্য হল মডেল থানা পুলিশ
পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ অবশেষে গণমাধ্যমের চাপে পড়ে সোনিয়ার আত্মহননের প্ররোচনার যৌনসন্ত্রাসদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বাধ্য হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশ। গত ১০ অক্টোবর ধর্ষকদের হাতে সম্ভ্রম হারানোর লজ্জা ও ব্ল্যাকমেইলের হুমকিতে কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নবম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী ও পাথর শ্রমিকের কন্যা রহিমা আক্তার সোনিয়া আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে মডেল থানা লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় মডেল থানায় ইউডি করা হয়। পরে সোনিয়া আত্মহননের পিছনে প্ররোচনাকারীদের সন্ধান পেলে নিহতের স্বজনরা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান। থানায় মামলা না নেওয়ার ঘটনায় ফুসে উঠে সোস্যাল নেটওয়ার্কসহ সকল গণমাধ্যম। ১৩ অক্টোবর শুক্রবার শীর্র্ষ গণমাধ্যমগুলোতে একযোগে প্রকাশিত হয় সোনিয়া আত্মহননের খবর। প্রচারিত হয় অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া টিভিতে। শেয়ারিং, লাইক ও প্রতিবাদী মন্তব্যে সরব সোস্যাল নেটওয়ার্ক ফেসবুকেও। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের রাতেও নিহতের পরিবার থানায় মামলা করতে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রেখেও মামলা রেকর্ড না হওয়ায নিরাশ হয়ে ফিরেন তারা। এ খবর ফেসবুকে তাৎক্ষণিক আপডেট হওয়ায় চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সচেতন ও সাধারণ নাগরিক মহলেও। অবশেষে বাধ্য হয়ে আজ শনিবার ঘটনার পঞ্চম দিনে ধর্ষক রাজন ও আতিকের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করতে বাধ্য হয় মডেল থানা পুলিশ। যার মামলা নং-৩, ১৪/১০/১৭। থানা পুলিশ মামলা না নেওয়ার বিষয়ে নিহতের ঘটনাস্থল ও কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ছুটে গেছেন পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দেন। এসময় দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আনিছুর রহমান। এদিকে সোনিয়া আত্মহত্যা প্ররোচনাকারী পলাতক থাকায় তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবিতে আগামীকাল রবিবার বেলা ১১টায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। মানববন্ধনে অংশ নিবেন প্রতিষ্ঠানটি ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন সংগঠনসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। ঘটনার নেপথ্যে-গত ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে সোনিয়া কোচিং এর উদ্দেশে বাড়ি হতে বের হলেও কিছুক্ষণ পরে ফিরে। তার ফিরে আসার কারণ জানতে চান স্বজনরা। ভাল লাগছে না বলে ঘরের দরজা বন্ধ করে উড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। তার আত্মহত্যার পিছনে ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেইলের বিষয় উঠে আসে। এ ঘটনার হোতা হিসেবে উঠে আসে মনসুর আলম রাজন (৩২) ও আতিকুর রহমান আতিক (৩৪) নামের দুই যুবকের নাম। রাজন তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ড বয় এবং আতিক স্থানীয় বাজারে ফ্ল্যাক্সিলোডের ব্যবসা ও বাংলালিংকের কাস্টমার কেয়ারে কাজ করেন। পরিবারের অভিযোগ, গত তিন মাস আগে রাজন অসুস্থ্য মায়ের ঔষুধ দেবার নাম করে মোবাইল ফোনে সোনিয়াকে ডেকে নিয়ে উপজেলার এক বাসায় তার বন্ধু আতিকসহ ধর্ষণ করে। সে ধর্ষণ চিত্র মোবাইলে ধারণ করে ইন্টারনেটে প্রকাশের ভয় দেখিয়ে তিন মাস ধরে নানাভাবে ধর্ষণ করে আসছিলেন। ঘটনাটি মেয়ের কাছ থেকে জানতে পেরে তার মা সেলিনা বেগম ও মামা ফারুক হোসেন রাজন ও আতিকের সাথে কথা বলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। এ থেকে মুক্তি চাইলেও ওই যৌনসন্ত্রাসদের হুমকি সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এ বিষয়ে রাজন ও আতিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করতে গেলেও মামলা না নেওয়ার নানা অজুহাত দেখানো হয় তাদের। সোনিয়ার বাবা জাহেরুল ইসলাম একজন পাথর শ্রমিক। মেয়ে হারানো আর্তনাতে জাহেরুল ইসলাম জানান, ওরা প্রভাবশালী হওয়ায় বুধবার রাতে ধর্ষণ এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে রাজন ও আতিকের নামে তেঁতুলিয়া থানায় মামলা করতে যাই; কিন্তু পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করেনি। আসামিও ধরেনি। এ বিষয়ে আজ বিকেল ৫টায় থানার ওসি সরেস চন্দ্রের সাথে মুঠোফোন কথা বললে তিনি জানান, আগেই বলেছি এ ঘটনায় ইউডি মামলা রেকর্ড হওয়ায় লাশের ময়নাতদন্ত রিপোট পাওয়ার পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর ৯ এর (ক) ধারায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।