টঙ্গীতে বস্তি দখল করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার জবরদখলকারীরা
মো. রবিউল ইসলাম( টঙ্গী প্রতিনিধি)
টঙ্গীর কলাবাগান বস্তিতে পুলিশের সহায়তায় জোরপূর্বক জায়গা দখল করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের স্বীকার হয়েছে একদল জবরদখলকারী ও সন্ত্রাসী। এসময় পুলিশও জনগণের রোষানলে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। গণধোলাইয়ের শিকার টঙ্গীর চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলার আসামী মো. ফরহাদ মাতবর (৩৫) ও মো. আক্তার হোসেন (৪০) দৌড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। এঘটনায় বস্তি এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বস্তিবাসী জানায়, টঙ্গীর কলাবাগান বস্তিতে গত ৩০-৩৫ বছর যাবত মুন্নু টেক্সটাইলস, জিন্নাত, নিশাত ও অলিম্পিয়া জুট মিলের চাকরিচ্যুত শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বসবাস করে আসছেন। গত কয়েক মাস যাবত টঙ্গীর শীর্ষ সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলার আসামী মো. ফরহাদ মাতবর ও মো. আক্তার হোসেনসহ একদল সন্ত্রাসী বস্তি জায়গা জবর দখলের পায়তারা চালায়। একপর্যায়ে বস্তিবাসীর প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হটে। পরে আজ রোববার ফরহাদের লোকজন বাঁশ ও কাঠসহ ঘর নির্মানের বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে বস্তি দখলের চেষ্টা চালায়। এতে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে তারা চলে যায়। পরে দুপুর দুইটার দিকে টঙ্গী থানার এসআই মোশাররফ হোসেন ও পিএসআই মাইনুল ইসলামসহ একদল পুলিশ নিয়ে সন্ত্রাসী ফরহাদ বস্তি দখল করতে যায়। এসময় বস্তিবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে ফরহাদ ও তার লোকজনের সাতে বস্তির নেতাদের বাগবিতন্ডা শুরু হলে বস্তির সাধারণ লোকজন উত্তেজিত হয়ে জবরদখলকারী সন্ত্রাসী ফরহার ও তার লোকজনের উপর চড়াও হয় এবং গণধোলাই দেয়। এসময় পুলিশ সদস্যরা সন্ত্রাসীদের বাঁচাতে গেলে তারাও জনতার রোষানলে পড়েন। পরে এলাকাবাসী বস্তি রক্ষার্থে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয় এবং জবরদখলকারী ও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে তাদের বসতভিটা রক্ষা করার জন্য জীবন দিতেও রাজি বলে তারা জানান। বস্তিবাসী জিন্নাতের শ্রমিক আব্দুল মালেক (৬৫) ক্ষোভের সাথে বলেন, জিন্নাত জুট মিলস বন্ধ হয়ে গেলে আমরা শত শত শ্রমিক-কর্মচারি চাকরি হারাই। এর পর থেকেই আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে কলাবাগান বস্তি মাথা গোজার ঠাই করি। গত ৩০-৩৫ বছর যাবত তিল তিল করে আমরা এই বস্তিটি গড়ে তুলেছি। এখন একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী আমাদের বসতবাড়ি দখল করতে চায়। আমরা বস্তিতে হানাহানি করে থাকতে চাইনা । আমাদেরকে অন্যত্র পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করে দিলে আমরা চলে যাব। না হয় আমাদেরকে এখানেই থাকতে হবে। বস্তিবাসী সুমি আক্তার ও ডলি বেগম আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের জীবনের শেষ সম্বলটুকু দিয়ে আমরা বস্তিতে খুপরি ঘর তৈরি করে ছেলে মেয়ে নিয়ে কোনরকম বসবাস করে আসছি। এই বস্তিতেও আজ শুকনের চোখ পড়েছে।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী তৃণমূল জনসংগঠনের সভাপতি মো. মিন্নত আল মিনু বলেন, গাজীপুর-২ আসনের এমপি মো. জাহিদ আহসান রাসেলের নির্দেশ বস্তিবাসীদের অন্যত্র পূর্নবাসন না করে কোন বস্তি উচ্ছেদ করা যাবে না। কেউ যদি বস্তি দখল করতে যায় তাহলে তারা অন্যায় করেছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে টঙ্গী থানার এসআই মোশাররফ হোসেন বলেন, রাজউকের একটি রাস্তা বের করা হবে সেজন্য আমাদেরকে ওসি সাহেব আমাদের পাঠিয়েছিলেন। ঘটনাটি গাজীপুরের এসপি স্যারও জানেন।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ তালুকদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রাজউকের এক লোক জায়গা মাপতে গিয়েছিল। সেখানে তার উপর বস্তিবাসী আক্রমন করেছে খবর পেয়ে তাকে উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম।