রোহিঙ্গা সংকট: এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি বিশ্ব দেখেনি
মাত্র এক মাসের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বিশ্ব এমন ভয়াবহ শরণার্থী সঙ্কট আর দেখেনি বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএমের মহাপরিচালক উইলিয়াম লেসি সুইং।
রোহিঙ্গাদের সংকট পরিদর্শনে কক্সবাজারে ৩ দিনের সফর শেষে বুধবার এ কথা বলেন তিনি।
এদিকে, রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বকে দায়ী করছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন।
এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এক চিঠিতে মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা।
থামছেই না রোহিঙ্গা ঢল। কেউ নদী পার হয়ে, কেউ দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে ঢুকছে বাংলাদেশে। রাখাইনে নির্যাতন আর নিধনযজ্ঞের ভয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা অভিযোগ করছেন।
এপর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এমন ভয়াবহ শরণার্থী সঙ্কট বিশ্ব আর দেখেনি বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা- আইওএমের মহাপরিচালক উইলিয়াম লেসি সুইং।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বুধবার তিনি এ কথা বলেন।
রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম আরো জোরদারের আশ্বাস দেন আইওএম প্রধান।
তিনি বলেন, রাখাইন থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যে দুর্দশা বিরাজমান তা খুবই কষ্টদায়ক। বিপুল সংখ্যক মানুষের ভোগান্তি লাঘবে মিলছে অপ্রতুল ত্রাণ সহায়তা।
সফরে লেসি সুইং বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গাদের জীবনরক্ষায় আরো কী সহায়তা দেয়া যায় সে বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
এদিকে, রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বই দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন।
তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা তা স্পষ্ট করেননি তিনি। বুধবার ওয়াশিংটনে এক অনুষ্ঠানে টিলারসন বলেন, রাখাইনে চলমান এই নিধনযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে বিশ্ব নিশ্চুপ থাকতে পারে না।
এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এক চিঠিতে মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছেন ৪৩ জন মার্কিন আইনপ্রণেতা। রোহিঙ্গা সঙ্কটের জন্য যারা সুনির্দষ্টভাবে দায়ী তাদের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবিও জানান তারা।
অপরদিকে, রাখাইনে দ্রুত সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিকে টেলিফোনে আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি।
বুধবার তিনি সুচিকে জানান, পররাষ্ট্রবিষয়ক কাউন্সিলে গত সোমবার রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে মন্ত্রীরা রাখাইনে অবাধ ত্রাণ সরবরাহ এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর তাগিদ দিয়েছেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সাংসদরা।
তারা মঙ্গলবার পার্লামেন্টে এক বিতর্কে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নিপীড়নকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়ে একটি প্রস্তাবও পাস করেন।