রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজ) সভাপতি কাজী শাহেদকে হত্যার চেষ্টার
শিবলী সাদিক: রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সভাপতি কাজী শাহেদকে হত্যার চেষ্টার করা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর অলোকার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এসএম আবদুল কাজিম ওরফে বাবু (৪০) নামের ওই হামলাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বাবুর বিরুদ্ধে রাতেই নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন সাংবাদিক কাজী শাহেদ। পরে সোমবার সকালে গ্রেফতার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার বাবু নিজেকে অপ্রচলিত বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে শহরে নানান অপকর্ম করে বেড়ান বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর সাংবাদিকরা।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোর ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিক কাজী শাহেদ জানান, ঘটনার সময় তিনি অলোকার মোড় থেকে তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে একই মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় পেছন থেকে পিস্তল হাতে নিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধাওয়া করে বাবুসহ তার এক সহযোগী।
পরে বিষয়টি টের পেয়ে শাহেদ তার বাড়ির কাছে গিয়ে নগর পুলিশের কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। এরপর পুলিশ গিয়ে বাবুকে আটক করে। তবে তার সহযোগী অপর একজন পালিয়ে যায়। পরে তিনি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
এদিকে রাজশাহীর এই সাংবাদিক নেতাকে হত্যা চেষ্টার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে রাজশাহীর সাংবাদিক সমাজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। তারা সবাই হামলাকারীর কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহীর সাংবাদিকরা।
সোমবার দুপুরে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে আরইউজে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপি ওই মানববন্ধনে রাজশাহীর সকল সাংবাদিক ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। তারা হামলাকারীর কঠোর শাস্তি দাবি করেন। পাশাপাশি এ ঘটনার নেপথ্যে যারা জড়িত, তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
আরইউজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান খান আলমের সভাপতিত্বে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, কাজী শাহেদ একদিকে সাংবাদিক, অন্যদিকে সাংবাদিক নেতা। তাকে হত্যার চেষ্টা মেনে নেয়া যায় না। তাকে হত্যার করার পরিকল্পনার সঙ্গে যারা যারা জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, রাজশাহীর মানুষ সজাগ আছে। রাতের অন্ধকারে কোনো সাংবাদিকের ওপর হামলা কেউ মেনে নেবে না। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা না হলে আন্দোলন আরও কঠিন আকার ধারণ করবে। মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামানিক দেবু বলেন, সাংবাদিক শাহেদ একজন নির্ভিক সাংবাদিক। তাকে হত্যার চেষ্টা পরিকল্পিত। জড়িতদের শাস্তি না হলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, যে ব্যক্তি হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে, সে একজন কথিত সাংবাদিক। এদের ব্যাপারে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। তাদের অপসাংবাদিকতা রুখে দেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় একজন হলুদ সাংবাদিক কাজী শাহেদের মতো সাংবাদিক নেতাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সদস্য আনিসুজ্জামান বলেন, এমন ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা সাংবাদিকদের জানা নেই। এ ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে হবে। তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এমন হামলা আর মুখ বুজে সহ্য করা হবে না। আরইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিবলী নোমান বলেন, রাষ্ট্রপতি দুই দিনের সফরে রাজশাহী আসছেন। ঠিক তার আগে সাংবাদিককে হত্যার চেষ্টা করে রাজশাহীকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। হামলাকারীদের আসল উদ্দেশ্যে কী, তা সবার কাছে স্পষ্ট। বিষয়টি প্রশাসনকেও বুঝতে হবে।
আরইউজের কোষাধ্যক্ষ তবিবুর রহমান মাসুম বলেন, শুধু গ্রেফতার নয়, হামলাকারীর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সাংবাদিক সমাজ বসে থাকবে না। সিনিয়র সাংবাদিক কাজী গিয়াস বলেন, রাজশাহী শান্তির নগরী। এ শহরে সাংবাদিককে কখনো হত্যার চেষ্টা হয়নি। যারা এ সাহস দেখিয়েছে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কালের কণ্ঠের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে সাংবাদিকরাই তাদের কলম নিয়ে এসব অপসাংবাদিকদের রুখে দাঁড়াবে। হলুদ সাংবাদিকদের বিষদাঁত ভেঙে দেয়ার সময় এসেছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সভাপতি মোমিনুল ইসলাম বাবু বলেন, রাজশাহীতে অপসাংবাদিক তৈরির জন্য এখন প্রশাসনই দায়ি। যাকে তাকে পত্রিকার ডিক্লারেশন দিয়ে প্রশাসন হলুদ সাংবাদিক তৈরির কারখানার অনুমোদন দিচ্ছে। আন্ডারগ্রাউন্ড ওই পত্রিকাগুলো চাঁদাবাজি করার জন্য তাদের সাংবাদিকদের লাইসেন্সস্বরুপ পরিচয়পত্র তুলে দিচ্ছে। প্রকৃত সাংবাদিকদের একত্রিত হয়ে তাদের অপসাংবাদিকতা রুখে দিতে হবে।
সিনিয়র সাংবাদিক তানজিমুল হক বলেন, সাংবাদিক কাজী শাহেদ অত্যন্ত বিচক্ষণার সাথে আরইউজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাকে হত্যার চেষ্টা মানে রাজশাহীর সকল সাংবাদিকের ওপর হামলা। তাই এখন থেকে রাজশাহীর সাংবাদিকরা অপসাংবাদিকদের সব অপকর্ম রুখে দাঁড়াবে বলেও হুসিয়ারি দেন তিনি। মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম বলেন, শুধু হলুদ সাংবাদিক নয়, তাদের যারা পরিচালিত করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে।
আরইউজের সাধারণ সম্পাদক মামুন-অর-রশীদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন- নির্বাহী সদস্য সাইফুর রহমান রকি, রাজশাহী টিভি জার্নালিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বদরুল হাসান লিটন, ফটো জার্নালিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ, সাংবাদিক সৌরভ হাবিব, শিক্ষক নেতা শফিকুর রহমান বাদশা, চারঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি মোজাম্মেল হক প্রমুখ।
মানববন্ধনে বিএফইউজের সদস্য জাবীদ অপু, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম খালিদ ওয়াসি কেটু, রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ডা. এফএমএ জাহিদ, কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক কুমার, কবি শামীম হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক শ.ম সাজু, শরীফ সুমন, সিনিয়র ফটোসাংবাদিক আজাহার উদ্দীন, সামাদ খান, সাংবাদিক আহসান হাবিব অপু, আনোয়ার আলী হিমু, রাশিদুল ইক রুশো, তৈয়বুর রহমান, কাজী নাজমুল ইসলাম, ইলিয়াস আরাফাত, বুলবুল হাবিব, রিমন রহমান, মাহী ইলাহি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।