প্রসঙ্গ সিটি নির্বাচন ৬ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনও প্রকার প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছে না
সদরুল অাইন
৬ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনও প্রকার প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। দলটি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মতোই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে আগ্রহী। আওয়ামী লীগের আসল টার্গেট জাতীয় নির্বাচন। তাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও জোর দিচ্ছে দলটি। দলের একাধিক নেতা আমার সংবাদকে বলেছেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে লড়াই করে জিততে চায় আওয়ামী লীগ। আর এজন্য হেভিয়েট ও জনপ্রিয় নেতাদের প্রার্থী করতে চাচ্ছে দল।
এছাড়া গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুরে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় এবার এই সিটি করপোরশনগুলো তো আছেই, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও প্রার্থী বাছাইয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি ছাড়াও উঠান বৈঠক ও সভা সেমিনার করছে। আওয়ামী লীগ নেতারা সরকারের স্থানীয় উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন। নগরবাসীর দুর্ভোগ ও বরাদ্দ না পাওয়ায় উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে এমন বক্তব্য তুলে ধরছেন বিএনপির নেতারা। আসন্ন ছয় সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে উষ্ণতা বাড়ছে রাজনীতিতে।
এসব সিটি নির্বাচনে জয়ী হতে পরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণ করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দল দুটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে ঘুরেফিরে আসছে সিটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ। ওই সব বৈঠক থেকে প্রার্থী বাছাই, সাংগঠনিক কর্মসূচির বিষয়ে দেওয়া হচ্ছে নির্দেশনা। যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরাও আসছেন প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে কিংবা প্রার্থীর পক্ষে সুপারিশ বা কাজ করতে। ছয় সিটি নির্বাচন বড় দুই দলের জন্যই জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের কঠিন অগ্নি পরীক্ষা। দুই দলই তাই আসন্ন এ নির্বাচনে জয়ী হতে মরিয়া। দল বড় হওয়ায় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতার সংখ্যাও সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে। দুই দলের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি জোরদার হয়েছে ছয় সিটিতে। উঠান, ঘরোয়া বৈঠক ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে তাদের অংশ গ্রহণ বেড়েছে। দলের কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের দূরত্ব ঘোচানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্র থেকে।গত সিটি কর নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় এই বিএনপি আগামী নির্বাচনেও এসব মহানগরীর পাশাপাশি রংপুরেও নিজেদের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে চায়।
জানা গেছে, বর্তমান পাঁচ মেয়রের মধ্যে তিনজনের প্রতিই শুভ দৃষ্টি বা আস্থা আছে বিএনপির। প্রধান দুই দলের বাইরে এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং বামপন্থী বিভিন্ন দলও মেয়র পদে প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না জামায়াতে ইসলামী। তবে অনেক জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে প্রস্তুত রয়েছেন। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও প্রার্থী দেওয়ার কথাও শুনা যাচ্ছে। রংপুর জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এককভাবে মেয়র পদে জিততে হলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।
এ সিটিতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন ১৩ জন। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী পাঁচজন, জাতীয় পার্টির দুজন, নাগরিক সমাজের একজন। জামায়াতের কেউ তৎপর নন। বর্তমান মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে বলে প্রচারণা রয়েছে। নগরীতে তাঁর সমর্থকরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে। ঝন্টু দাবি করেছেন, দলীয় হাইকমান্ড থেকে তাঁকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নগরীতে পোস্টার লাগানো হয়েছে। এতে অন্যরা সংক্ষুব্ধ। জানা যায়, প্রার্থী নির্বাচন ও তৎপরতার দিক দিয়ে একটু এগিয়ে আছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে তৎপর থাকার সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে এবং সিলেটে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে। বাকি চার সিটিতে মেয়র পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দলের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানী ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে রাজশাহীসহ একাধিক সিটিতে সবুজ সংকেত পাঠানো হয়েছে। বিএনপি বরিশাল ও গাজীপুরে মেয়র পদে প্রার্থী পরিবর্তন করতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
ছয় সিটিতে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে শুরু হয়েছে দেয়াল লিখন। দলীয় প্রধানকে অভিনন্দন জানিয়ে সাঁটানো হচ্ছে পোস্টার। দলীয় প্রতীকে সিটি নির্বাচন হবে বলে নৌকা বা ধানের শীষের চিত্র দেয়ালে এঁকে ভোট চাওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বা জাতীয় উৎসব অনুষ্ঠান উপলক্ষে নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টানানো হচ্ছে চোখে পড়ার মতো রঙিন ব্যানার। দলীয় সমাবেশ, বিয়ে, মিলাদ, জন্মদিনসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও কর্মকাণ্ডে সম্ভাব্য প্রার্থীরা যোগ দিচ্ছেন প্রতিযোগিতা করে। কাউন্সিলর হতে আগ্রহীরাও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গণসংযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের ফাঁকে উঠান বৈঠক, ঘরোয়া বৈঠকে নৌকা প্রতীকে ভোট চাওয়া হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আস্থার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চায়। কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয়। এর পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন করে তারা। এ কমিশনের তত্ত্বাবধানে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে দ্বিতীয় নির্বাচন