গাংনীর জোড়পুকুরিয়া গ্রামে ভুয়া স্বাক্ষী দিয়ে বিয়ে রেজিষ্ট্রি বাল্য বিয়ে সম্পন্ন আদালতে ধর্ষনের অভিযোগ
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এম এ লিংকন (ফলোআপ) : মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া গ্রামের মৃত ময়নালের ছেলে কামরুজ্জামান খোকন একই গ্রামের দিন মজুর মুকুল হোসেনের মেয়েকে বিয়ে করে বলে দাবি করে কামরুজ্জামান খোকন। এদিকে মেয়ে ও তার পরিবার অভিযোগ করে কোন বিয়ের কার্য সম্পাদন না করে মেয়েকে অপহরণ করে গাংনীর জনৈক ডালিয়ার বাড়িতে আটকিয়ে রেখে তাকে ধর্ষন করা হয়। এ ঘটনায় মেহেরপুর কোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়। এ ঘটানায় বিভিন্ন দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হয়। নিউজ প্রকাশের পর বিয়ের কাজি একই উপজেলার জুগিরগোঁফা গ্রামের মোঃ নূহ নাজিউল্লাহর পিতা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন বিধি মোতাবেক বিয়ে হয়েছে। এদিকে মেয়ের পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে সরেজমিনে ঐ কাজির অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, আসল কাজি নূহ নাজিউল্লার অনুপস্থিতিতে এ বিয়ে রেজিষ্ট্রির কাজ সম্পন্ন করেন তার বাবা মোঃ ছাত্তার মিয়া। মেয়ে পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে কাজি নূহ নাজিউল্লার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তার বাবা সাংবাদিকদেরকে জানান, আমার ছেলে বেশির ভাগ সময় কুষ্টিয়াতে থাকে তাই তার কাজ গুলো আমিই সম্পন্ন করে থাকি। এদিকে মেয়ে পক্ষ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন বিয়েতে ভুয়া স্বাক্ষী ব্যাবহার করা হয়েছে। মেয়ে আরো দাবি করে সে এই বিয়েতে উপস্থিৎ ছিলোনা এবং বিয়ের কোন ভলিউমে স্বাক্ষর করেনি। এদিকে বিয়ের রেজিষ্ট্রি ভলিউমে যাদের নাম আছে তারা হলো জোড়পুকুরিয়া গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে আল মামুন ও কোদালকাটি গ্রামের মোঃ খাইরুল ইসলামের ছেলে মনিরুজ্জামান সে স্বপন নামে এলাকায় পরিচিত। উল্লেখিত স্বাক্ষীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করলে স্বাক্ষি আব্দুল্লা আল মামুন বিয়েতে তার উপস্থিতি ছিলোনা এবং কোথায় কবে বিয়ে হয়েছে তাও সে জানেনা বলে সাংবাদিকদের জানায়। তার অনুপস্থিতির বিষয়টি স্বীকার করে বিয়ের বর কামরুজ্জামান বলেন সে উপস্থিৎ ছিলোনা কিন্তু আমরা দুজনে বিয়ে করেছি এটা ঠিক। এদিকে অপর স্বাক্ষী মনিরুজ্জামান স্বপন বিয়ের কথা স্বীকার করে বলেন আমি ঐ বিয়েতে স্বাক্ষি হিসেবে উপস্থিৎ ছিলাম বলে জানান এবং এ বিষয়ে পরে বিস্তারি বলবেন। তিনি বলেন জোড়পুকুরিয়া গ্রামের ঐ মেয়ের সাথে খোকনের বিয়ে হয় এর যথেষ্ঠ প্রমান আছে। কিন্তু পরে যোগাযোগ করা হলে তিনি দশ মিনিট পর কথা বলবেন বলে জানালে আবারো যোগাযোগ করা হয় কিন্তুু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ দিকে কাজি নূহ নাজিউল্লাহর পিতা সাবেক কাজি আঃ ছাত্তার এ বিয়ে সম্পন্ন করেন বলে জানা যায়। তার সাথে স্বাক্ষীর অনুপস্থিৎ এর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন দু’জন স্বাক্ষির উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন মেয়ের জন্ম সনদের উপর ভিত্তি করে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে মেয়ের স্কুল সার্টিফিকেট অনুযায়ি তার এখনও বিয়ের বয়স হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক কাজি আঃ ছাত্তার বলেন আমাদের যে কাগজ দেখানো হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে বিয়ে সম্পন্ন করেছি। এদিকে জোড়পুকুরিয়া গ্রামের মেম্বর সাহাবুদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, খোকন মেয়েকে আটকের ১২ দিন পর আমাদের কাছে ফেরত দেয়। আর ওর বিয়েতে কোন স্বাক্ষি উপস্থিৎ ছিলোনা তাহলে বিয়ে হয় কীভাবে। তিনি কোদালকাটি গ্রামের স্বাক্ষি মনিরুজ্জামান স্বপনের বিষয়ে বলেন সে আমার কাছে স্বীকার করেছে যে সে ঐ বিয়েতে উপস্থিৎ ছিলোনা। মেম্বর সাহাবুদ্দিন আরো জানান, জোড়পুকুরিয়া গ্রামের যাকে স্বাক্ষি হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে তা মিথ্যা বা ভুয়া হওয়ায় আব্দুল্লা আল মামুন থানায় জিডি করার প্রস্তুতি নেন বলে জানা যায়। এদিকে আলোচিত এ বিয়ের কাজির সহযোগি সহড়াবাড়ি গ্রামের সাইকেল মেকার আঃ কাশেম এর ছেলে বাবুল আক্তারের সাথে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিরক্ত সুরে বলেন আপনাদের সাথে আর কত কথা বলতে হবে। স্বাক্ষির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন স্বাক্ষি ছাড়া কী বিয়ে হয়। এক জন স্বাক্ষি উপস্থিৎ ছিলেন না এ বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি মটর সাইকেলে আছেন বলে ফোনটি কেটে দেন। এলাকাবাসি জানান, কাজি মোঃ নূহ নাজিউল্লাহর সহযোগি বাবুল আক্তার অতি কৌশলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে একাধিক বাল্য বিয়ে সম্পন্ন করে থাকেন। এদিকে আলোচিত এ বিয়ের ব্যাপারে এলাকায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া কামরুজ্জামান খোকন এলাকায় এই বিয়েটি কৌশলে করতে পারেন বলে এলাকাবাসি জানান, কারণ সে উভয় কুল বজায় রাখার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় গত ১৭/১০/২০১৭ ইং তারিখে মেয়ে নিজে বাদি হয়ে মেহেরপুর কোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কামরুজ্জামান খোকন ও একই উপজেলার বাহাগুন্দা গ্রামের গোলামের ছেলে রফিকুল ইসলাম ওরফে রাফিজুলের নামে মামলা করেছে । গাংনী থানার ওসি তদন্ত জানান, মামলাটি তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহনের নির্দেশ আছে। মামলার তদন্ত চলছে। উল্লেখ্য, গত ০১/১০ ২০১৭ ইং তারিখে গাংনীর এস এম প্লাজা থেকে সহযোগি এজাহারে উল্লেখিত রফিকুল ইসলাম ওরফে রাফিজুলের সহযোগিতায় কামরুজ্জামান খোকন তাকে অপহরন করে নিয়ে যায় এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।