নেতৃত্বের লড়াইয়ে বিব্রত রাজশাহীর তৃণমূল বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক : নেতৃত্বের লড়াইয়ে অস্থিরতা বাড়ছে রাজশাহী বিএনপিতে। জেলা ও মহানগর থেকে শুরু করে গ্রুপিং এর রাজনীতি ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলা পর্যায়ে। দলীয় কর্মসূচীতে এক গ্রুপের নেতারা অন্য গ্রুপের কাউকে ডাকছে না। এতে বিব্রত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
দলটির কেন্দ্রীয়ভাবে মোটাদাগে দুইটি লবিং অনুসরণ করা হলেও রাজশাহীতে বিভক্তি চার গ্রুপে। এর একটির নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও নগরের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু এবং নগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। আর অপরগ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নগর বিএনপির সভাপতি ও সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং জেলা সভাপতি তোফাজ্জাল হোসেন তপু। এছাড়াও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা ও রাজশাহী বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতের নেতৃত্বে অপর দুইটি গ্রুপও সক্রিয়।
রাজশাহী বিএনপির একাধিক সূত্রমতে, মিনু-মিলন গ্রুপে নগর বিএনপির বড় অংশ ছাড়াও রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবু সাঈদ চাঁদের নেতৃত্বে জেলার একটি অংশ। এছাড়াও তাদের সঙ্গে রয়েছে জেলা ও নগর যুবদলের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও নগর ছাত্রদল ছাড়াও জেলার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি একাংশ মিনু-মিলনের পক্ষে রয়েছে।
অন্যদিকে, বুলবুল-তপুর সঙ্গে রয়েছেন জেলার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মুন্টু, নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন, নগর যুবদলের সাবেক আহবায়ক ওয়ালিউর রানা। জেলা ও নগর যুবদল এবং ছাত্রদল হাত ছাড়া হলেও জেলা ছাত্রদলের সভাপতির নেতৃত্বে একটি অংশ বুলবুল-তপুর সঙ্গে রয়েছে। এছাড়াও বুলবুল-তপুর পক্ষে সমর্থন রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার আমিনুল হক।
এছাড়াও দুইজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির একটি অংশ ছাড়াও শ্রমিক দল এবং মহিলা দল রয়েছে সাবেক সাংসদ ও জেলার সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফার পক্ষে। তাদের পক্ষে সমর্থন রয়েছে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও রাজশাহীর প্রবীণ নেতা কবীর হোসেনের।
অন্যদিকে শাহীন শওকতের নেতৃত্ব নগর ও জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতাকে নিয়ে একটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তাদের পক্ষে সমর্থন রয়েছে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল মনির।
তবে দলের কেন্দ্রীয়ভাবে মোটাদাগে মিনু ও বুলবুলের নেতৃত্বে দুইটি গ্রুপ বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে মিনুর গ্রুপ যোগাযোগ রক্ষা করছে দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। আর বুলবুল যোগাযোগ রক্ষা করছেন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রেজভীর সঙ্গে।
দলটির তৃণমূলের নেতার চলছেন, রাজশাহী বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নেতাদের মধ্যে এ দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। এতে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে গেছে রাজশাহী বিএনপি। সামগ্রীকভাবে রাজশাহী বিএনপি চার ভাগে বিভক্ত হলেও প্রতিটি আসন ও উপজেলা পর্যায়ে একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
সংসদীয় আসন ও উপজেলা পর্যায়ে সাবেক এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এসব গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দলের এই দ্বিধা-বিভক্ত নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। যার প্রভাবে অনেককেই দল থেকে পদত্যাগ করা ছাড়াও দলীয় কর্মসূচীতে যাচ্ছে না।
সম্প্রতি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন জেলার দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ। শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ কররে পদত্যাগ করলেও এর নেপথ্যে রয়েছে সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার ওপর অভিমান। এছাড়াও জেলার বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌর যুবদলের পাঁচ সদস্যও সম্প্রতি পদত্যাগ করেন কমিটি ঘোষণা কেন্দ্র করে।
এর আগে ৩০ অক্টোবর জেলার পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন বিএনপির ৮৮ নেতাকর্মী দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তাদের অভিযোগ ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে ইউনিয়ন কমিটি দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী নগর ও জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র অন্যরা যেখানে ঘর গোছাতে ব্যস্ত, তখন রাজশাহী বিএনপির নেতারা নেতৃত্বের লড়াই করছেন। যার কারণে অনেকেই দল থেকে সরে যাচ্ছেন। মূলত: জেলা ও নগর থেকে ছিটকে পড়ে মিনু ও নাদিম মোস্তফা রাজশাহী বিএনপিতে এই গ্রুপিংয়ের রাজনীতি ছড়িয়ে দিয়েছেন।