অবশেষে একনেকে অনুমোদন পেলো নওগাঁ ও নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ কাজ স্বস্তিতে এলাকাবাসী
সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: অবশেষে মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পেলো নওগাঁর রাণীনগর-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ কাজ। অনেক চড়াই-উথরাই পার করে দীর্ঘ ১২বছর পর আলোর মুখ দেখতে পেলো এই মহাসড়ক নির্মাণের কাজের ফাইল। এতে করে স্বস্তি ফিরে এসেছে এলাকার মানুষের মাঝে। এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ আত্রাই-রাণীনগর অঞ্চলের শান্তির রূপকার স্থানীয় সংসদ সদস্যের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে উন্নয়নের মহাসড়কে আবার নতুন করে পা দিতে যাচ্ছে এই অঞ্চলটি। অত্র অঞ্চলের লাখ মানুষ এখন শুধু কাজের উদ্বোধনের অপেক্ষায় ।
অত্র অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া এই আঞ্চলিক মহাসড়ক। কারণ সড়কটি নির্মিত হলে নওগাঁর সঙ্গে নাটোর ও ঢাকার দূরত্ব অনেক কমে যাবে। এতে নওগাঁ বাসীর যাতায়াতে অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলমের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এলাকাবাসীর সেই চাওয়া অবশেষে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এই মহাসড়কটি নির্মিত হলে খুলে যাবে এর আশেপাশের মানুষের ভাগ্যের দুয়ার। বদলে যাবে অর্থনীতির চাঁকা। মহাসড়কের নির্মাণের কাজ শেষ হলে এর দুই পাশ দিয়ে তৈরি হবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান আর এই সব শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এই এলাকার হাজারো মানুষের। পাল্টে যাবে গ্রামীণ জনপদের চেহারা। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পাবে। বেড়ে যাবে রাস্তার আশেপাশের জমির দাম। তখন এক নতুন মাত্রা যোগ হবে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন-যাত্রায়।
নওগাঁ-রাণীনগর-নাটোর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন এবং বগুড়ার সাথে যোগাযোগের বিকল্প সড়কের জন্য ২০০৫ সালে শুরু হয় নওগাঁ-রাণীনগর-নাটোর আঞ্চলিক (বাইপাস) মহাসড়কের কাজ। সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাড়ে ২৩ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ হওয়ার পর ২০০৭ সালে বন্ধ হয়ে যায় এর নির্মাণ কাজ। এরপর প্রায় ১২বছর পার হলেও বাঁকি অংশের নির্মাণ কাজ আর শুরু হয়নি। অবশেষে নওগাঁ থেকে নাটোর যোগাযোগে অত্র এলাকার দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ শেষ হতে যাচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের জন্য ২০০৫ সালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৯৮কোটি টাকার প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন দেয়। কিন্তু পরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সীমিত আকারে ৫০ কোটি টাকার অনুমোদন দেয়। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাটোরের নলডাঙ্গায় নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। ওই অর্থায়নে ২০০৭ সালের জুন পর্যন্ত নওগাঁ-সান্তাহার রোডের ঢাকা রোড মোড় থেকে নাটোরের নলডাঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার রাস্তার মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়।
মহাসড়কের নওগাঁ অংশের ২৬ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ৭ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হয়। আর নাটোর অংশের সাড়ে ২২ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১৬ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হয়। নতুন করে অর্থায়ন না হওয়ায় মোট ২৩ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হওয়ার পর হাইড্রোলজি সমীক্ষার নামে বন্ধ হয়ে যায় সড়কটির নির্মাণ কাজ। সড়কটি পাকা না হওয়ায় বাঁকি সাড়ে ২৫ কিলোমিটার রাস্তা এখন এলাকাবাসীর বসবাস ও গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। রাস্তার ওপরে কলার বাগান, সবজি চাষসহ বসবাস করছে এলাকাবাসী। এরমধ্যে শুধুমাত্র সান্তাহারের ঢাকা রোড থেকে রাণীনগর রেল স্টেশন পর্যন্ত পাকা করণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এরপর রাণীনগর হতে নলডাঙ্গা পর্যন্ত রাস্তার মাটি ভরাটসহ অন্য কোন কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় নাটোর থেকে নওগাঁ-সান্তাহার হয়ে বগুড়াতে যাওয়ার জন্যে রাস্তাটি ব্যবহারের অনুপযোগি ছিলো।
এ বিষয়ে নওগাঁ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুর রহমান বলেন, এই পর্যন্ত রাস্তাটি নিয়ে বহু টানা-হেচড়ার পর গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এই আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শেষ করার জন্য ২০১কোটি ২৯ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। তাই আশা করা যাচ্ছে এই কাজ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত আকাশে যে ঘন কালো মেঘ ছিলো এই অনুমোদনে সেই কালো মেঘ দুর হয়ে গেলো। অচিরেই টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে এবং আশা রাখি আগামী দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে মহাসড়কটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
নওগাঁ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, এই রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে বগুড়ার ওপর নওগাঁর নির্ভরশীলতা কমবে। ঢাকা যাওয়ার জন্য নওগাঁ বাসীর বিকল্প পথ না থাকায় বগুড়া শ্রমিক ইউনিয়ন নানা ভাবে আমাদেরকে জিম্মি করে থাকে। বগুড়ার ওপর দিয়ে যেতে নওগাঁ শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিটি গাড়ীকে কমপক্ষে ৪০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। নওগাঁ-রাণীনগর-নাটোর সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এছাড়া নওগাঁ সঙ্গে ঢাকার দূরত্বও কমে আসবে।
এ ব্যাপারে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সাংসদ মো: ইসরাফিল আলম বলেন, এই মহাসড়কটি বাস্তবায়নের জন্য সংসদে বার বার দাবি উত্থাপন করেছি। অবশেষ উন্নয়নের রূপকার জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই দাবী পূরণ করলেন। তিনি আমার এলাকার মানুষকে আবার নতুন করে উন্নয়নের মহাসড়কের যাত্রী করে নিলেন। এই সড়কটির প্রায় অর্ধেক কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এই অনুমোদনের ফলে আমার এলকাবাসী দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেলো। আমার এতোদিনের পরিশ্রম সফলতার মুখ দেখতে পেলো।