এবার এমসিকিউ পদ্ধতি বাতিলের ভাবনা প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে
এমসিকিউ। চারটি অপশনের মধ্যে একটি বৃত্তভরাট। সহজ আর নম্বর তুলতে সুবিধা হওয়ায় খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ পদ্ধতিটি। তবে সাম্প্রতিক সময়ের পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্রফাঁসের প্রায় সব ঘটনায়ই এমসিকিউ পদ্ধতির অপব্যবহার হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর খুব দ্রুত এ পদ্ধতিতে উত্তরগুলো পরীক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। এছাড়া কয়েকটি ঘটনায় পরীক্ষা হলের দায়িত্বরত শিক্ষকরাও অনৈতিকভাবে এমসিকিউ পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে।
এমন অবস্থায় দেশের সব পাবলিক পরীক্ষায় বহু নির্বাচনী প্রশ্ন বা এমসিকিউ পদ্ধতি বাতিল করার কথা ভাবছে সরকার। কারণ হিসেবে অভিযোগ করা হচ্ছে, এ পদ্ধতির সুবিধা নিয়ে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রফাঁস করা হচ্ছে। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে। একটি অংশ বাতিলের পক্ষে কথা বললেও অন্যরা বলছেন, সমস্যার সমাধান করতে এখনি ঢালাওভাবে এমসিকিউ পদ্ধতি তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হবে না।
তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পদ্ধতি পুরো বাতিলের পক্ষে বলে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, যে পদ্ধতিটি মূল্যায়নে কোনো প্রভাবই ফেলছে না সেটি থাকার কোনো যুক্তি আছে বলে আমি মনে করি না।
আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে একটি বিষয়ে ৪০ নম্বরের এমসিকিউ এবং ৬০ নম্বরের সৃজনশীল পরীক্ষা নেয়া হত। তবে ২০১৫ সালে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছর থেকে প্রতিটি বিষয়ে এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০ নম্বর কমিয়ে আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে পুরো পদ্ধতিটি বাতিলের বিবেচনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
শিক্ষার্থীরা বলেন, পরীক্ষা যেভাবেই নেয়া হোক না কেন মূল্যায়নটা হতে হবে যথাযথভাবে। সৃজনশীল পদ্ধতি শুরুর পর বেশিরভাগ শিক্ষককেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। যার ফলে ভুগতে হচ্ছে আমাদের। তবে এমসিকিউ পদ্ধতি বাতিলের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবিদদের মধ্যে রয়েছে দ্বিমত।
শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, এই পদ্ধতিতে যথাযথভাবে মূল্যায়ন সম্ভব নয়। একটা পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে এমসিকিউ খাতা দিয়ে বসিয়ে দিলে সেও ১০টি প্রশ্নের মধ্যে তিনটির সঠিক উত্তর দিতে পারবে। এরমানে কি তার এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মতো জ্ঞান আছে?
তবে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, এমসিকিউ পদ্ধতিতে সমস্ত বই থেকেই প্রশ্ন করা হয়। তাই চট করে যদি এই পদ্ধতি তুলে দেয়া হয় তবে শিক্ষার্থীরা আর সমস্ত বই পড়বে না। তাই এই পদ্ধতি এখনই বাতিল করার পক্ষে নই আমি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আবদুল মান্নান বলেন, এমসিকিউ পদ্ধতি মেধার যথেষ্ট মূল্যায়ন হয় বলে আমি মনে করি না। এ কারণে শিক্ষার্থীদের লেখার দক্ষতা কমে যাচ্ছে। আমি সবসময় এই পদ্ধতি তুলে দেয়ার পক্ষে। তবে যেহেতু পদ্ধতিটা চালু আছে তাই আপাতত মূল্যায়নে এর নম্বর কমিয়ে দেয়া যায়।
এছাড়া প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে সব পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানোর দায়িত্বে থাকা বিজি প্রেসে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর কথাও ভাবছে সরকার।