রং বদলাচ্ছে বিএনপি
মামুন সরকার / সদরুল অাইন
জঙ্গি, প্রতিক্রিয়াশীল ইমেজ ভাঙ্গতে কাজ শুরু করেছে বিএনপি। জোটে মধ্যে জামাতসহ ইসলাম পছন্দ দলগুলো বিএনপিতে একীভূত হচ্ছে। আর বিএনপি প্রকাশ্যে জোট করার চেষ্টা করছে অধ্যাপক বি. চৌধুরীর বিকল্পধারা, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে। এভাবেই রং বদলিয়ে বিএনপি একটি উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের নতুন পরিচয় দিতে চাইছে।
বেগম জিয়া দেশে ফেরার পর এখন পর্যন্ত ২০ দলীয় জোটের বৈঠক করেনি। সারাদেশে বিএনপি যে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালিয়েছে, তাতে জামাতের একটি বিরাট অংশ বিএনপিতে যোগ দিয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপি দাবি করেছে, সদস্য সংগ্রহ অভিযানে ৮০ লাখ ফরম বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ২০ লাখ সদস্য নবায়ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর অর্ধেকই জামাত। দেশের অন্তত ২০ টি জেলায় জামাতের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা বিএনপিতে যোগ দিয়েছে।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই বিএনপি-জামাত একীভূত প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। জামাত যেহেতু নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধণ খুইয়েছে এবং তাদের প্রতীকও হারিয়েছে। তাই আলাদাভাবে নির্বাচন না করে জামাত বিএনপির সঙ্গেই মিশে যেতে চায়। এর ফলে, একদিকে যেমন জামাতের ভোটগুলো বিএনপি ঘরে থাকবে, অন্যদিকে বিএনপিও জামাত ছেড়েছে বলতে পারবে। জামাত কলঙ্ক মোচন করার পাশাপাশি নতুন মিত্রের সন্ধানে নেমেছে বিএনপি।
জামাত থাকার জন্য যাঁরা বিএনপির সঙ্গে মিশতে লজ্জা পাচ্ছিল, তাঁরা এখন আধা গোপনে, আধা প্রকাশ্যে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করছে। এ কারণেই অধ্যাপক বি. চৌধুরী আর ড. কামাল হোসেনের ঐক্য এগোয়নি। ওই ঐক্যে নাগরিক ঐক্যের মাহামুদুর রহমানও ছিল। এই তিনটি দলকে বিএনপি নির্বাচনের আগে কাছে পেতে চায়। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ‘২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ যেভাবে মহাজোট করেছিল আমরাও সেরকম আওয়ামী লীগকে একলা করতে চাই।’ তাঁর মতে, ‘আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট অক্ষুন্ন রেখেই মহাজোট গঠন করেছিল। তাই জামাত বাদে ২০ দল রেখে আমরা জোট করার চেষ্টা করছি।’
বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, কেবল বিকল্পধারা, গণফোরাম, বা নাগরিক ঐক্য নয় বরং আওয়ামী জোটের কাউকে নেওয়ারও চেষ্টা চলছে। সাম্প্রতিক সময় ১৪ দলের গৃহদাহ বিএনপিকে উৎসাহিত করেছে। সাম্যবাদী দলের নেতা দিলীপ বড়ুয়ার সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক পুরনো। ১৪ দলের অপাংক্তেয় ওই নেতাকে টোপ দেওয়া হয়েছে। জাসদের ইনুকেও বার্তা দেয়া হয়েছে ‘আপনাকে আমরা সম্মান দেব’। এমনকি এরশাদের সঙ্গেও বিএনপি যোগাযোগ করছে বলে জানা গেছে।
এসব করে বিএনপি রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটাতে চায়। সরকারকে একঘরে করতে চায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের জন্য আমরা সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই সংলাপে আগ্রহী। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমতই হলো আমাদের মূল লক্ষ্য।` রং বদলিয়ে বিএনপি কতটা গ্রহণযোগ্য হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।