ফলোআপ গাংনীর হাড়াভাঙ্গা গ্রামে নিহত গৃহবধু বিউটির দাফন সম্পন্ন স্বামীর বাড়ির লোকজন পলাতক॥
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এম এ লিংকন,মেহেরপুরঃ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রামের গৃহবধু বিউটি খাতুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহত গৃহবধুর মা বাবা। গতকাল এনিয়ে নানা নাটকিয়তা সৃষ্টি হয় এলাকায়। কেউ কেউ বলতে থাকে গৃহবধু বিউটি খাতুন সংসারে কলোহের জের ধরে আত্মহত্যা করতে পারে। আবার এলাকার অধিকাংশ লোকজন এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যা বলে মনে করেন। এদিকে গৃহবধুর শশুর বাড়ির লোকজন স্থানীয় মাতব্বরদের ম্যানেজ করে ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত বিউটির চাচা সাহাজুল এর প্রতিবাদ করে। তিনি জানান একজন মানুষ যে ভাবে আত্মহত্যা করার জন্য ফাঁস বাঁধে সেভাবে ফাঁস বাঁধা ছিলোনা। যে ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়েছে তা ছিলো গেরো বাঁধা এবং মাটিতে পা পড়ে ছিলো। গৃহবধৃর চাচা সাহাজুলের সাথে এলাকার অধিকাংশ লোক একমত হয়। এদিকে বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষে স্থানীয় মেম্বর মহনকে হাত করে ২লাখ ১০ হাজার টাকার প্রস্তাব দেয় নিহত গৃহবধু বিউটির শশুরবাড়ির লোকজন। মেম্বর মহন এ বিষয়টি এলাকাবাসির অগোচরে করতে চেয়েছিলো বলে ঘটনাটি আরো প্রশ্নবিদ্ধ হয় বলে এলাকাবাসি জানান।
এলাকাবাসি এও জানান, সকলকে নিয়ে জনসমক্ষে একটি মিমাংসা করলে কারো মনে সন্দেহ সৃষ্টি হতোনা। এদিকে সাংবাদিকদের দেখে রাজ্জাকের ছেলে রাজু ও মোয়াজ্জেমের ছেলে জাহাঙ্গীর দাবি করেন নিহত গৃহবধু বিউটির বাবা হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে আমাদের বিষয়ে বলেছেন, আমরা নাকি গৃহবধুর বাবাকে শিখিয়ে দিয়েছি যে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, এমন কথা থানায় বলতে’ তা একেবারে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন রাজু ও জাহাঙ্গীর। সাংবাদিকদের তারা আরো বলেন , এলাকায় আমরা সামাজিক উন্নয়নে নানান কাজ কর্ম করে থাকি বলে এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখার অনুরোধ করেন।
এলাকার লোকজন জানান, বিউটি খতুন নিহত হওয়ার দিন থেকে স্বামী জাহিদুল হক সহ সকলে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে তবে কোথায় গেছে কাউকে বলে যায়নি। সরেজমিনে গিয়ে বাড়িতে খোঁজ নিয়ে স্বামী জাহিদুল হক সহ তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি।
কাজিপুর ইউপির হাড়াভাঙ্গা গ্রামের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বর মহনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে গৃহবধু বিউটির সুরতহাল শেষে তার মৃত দেহ গ্রামের বাড়ি হাড়াভাঙ্গা পশ্চিম পাড়ায় নিয়ে আসলে এক হৃদয়বিদারকের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসি সহ পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। নিহত বিউটির বাবা দিনমজুর হাবিবুর রহমান ও মা মেয়ের লাশ দেখে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন।
এলাকাবাসি জানান, খুব অল্প বয়সে বিউটির বিয়ে হয় সে খুব ভালো মেয়ে ছিলো। বিয়ের পর থেকে তার স্বামীর বাড়ির লোকজন তুচ্ছ ঘটনাকে পুঁজি করে তার উপর অত্যাচার করতো বলে এলকাবাসি জানান। নিহত গৃহবধুু বিউটির অনিক নামের ২ বছরের শিশু পুত্র আছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্ত মুলোক শাস্তি দাবি করেছেন এলাকার সর্বস্তরের লোকজন।
গাংনী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, আপাতত অপমৃত্যু মামলা আছে তবে ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে যদি হত্যার আলামত পাওয়া যায় তাহলে হত্যা মামলা হবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ১৪/১১/২০১৭ ইং তারিখে দিবাগত রাতে হাড়াভাঙ্গা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার মনি ঠাকুরের ছেলে জাহিদুল (গৃহবধু বিউটির স্বামী) এর শোবার ঘরে গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়। পরে বুধবার ভোরে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।