মুন্সীগঞ্জের গ্রাম অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী নকসী কাথা তৈরির ধুম
শীতের আগমনে কাঁথা সেলাইয়ের ধুম পড়েছে। জেলার সদর উপজেলা থেকে শুরু করে জেলায় ৬টি উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে, এখন প্রতিনিয়ত গ্রামে গ্রামে চলছে কাঁথা তৈরির কাজ। গ্রামাঞ্চলে গৃহবধূ, তরুণীরা সংসারের দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখন কাঁথা তৈরি নিয়ে। পুরনো কাপড় আর সুঁই- সুতায় এখন তাদের অবসর সময়ের সঙ্গী। শিল্পকলার হাজার বছরের নিদর্শন প্রাচীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে এই সুচিশিল্পটি। পুরনো বস্ত্রখন্ডে তৈরি কাঁথায় বিচিত্র নকশা খচিত করার রেওয়াজ এক সময় ছিল গ্রাম-বাংলার প্রতিটি পরিবারের ঘরে ঘরে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া সব কিছুই বদলে দিচ্ছে তবুও, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় কাঁথা তৈরির ধুম পরে গেছে বহু বসত বাড়ির অঙ্গীনায়। সুঁই- সুতাই এখন যাদের অবসর সময়ে সঙ্গী সে সব কাঁথা শিল্প প্রিয় গৃহবধূ সালমা বেগম,ইরানি বেগম, ইভা অক্তার ও মহুয়ার সাথে এই সব বিষয়ে কথা বলে এবং কিছু তথ্যর ভিতিতে ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৩ হাজার বছর থেকে ১ম ও ২য় শতকে হরপ্পা ও মহেঞ্জ-দাড়ো সাঁচীর ভাস্কর্য যেসব পোশাক পাওয়া যায়, তাতে সুচিশিল্পকলার নিদর্শন রয়েছে। মিশর, গ্রিস, ইসরায়েল, ব্যাবিলন প্রভৃতি দেশে সুচিশিল্পকলার নিদর্শন পাওয়া যায়। চারু ও কারু শিল্পে বৈচিত্রময় মুন্সীগঞ্জের গ্রাম অঞ্চলে কাঁথাশিল্পের পরম্পরা আজও অব্যাহত রয়েছে। মুসলিম ঘরানার কিছু নিজস্বতার একটি দৃষ্টান্ত এ কাঁথাশিল্প। এই শিল্পটি সম্পূর্ণ নারীনির্ভর। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের নারীরাই এই কারুশিল্পে পারদর্শী। কাঁথাশিল্প এদের প্রথাগত কোনো বিদ্যা নয়। বাড়ির প্রবীণ নারীদের নিকট থেকে ছোটরা শিখে নেন এই কাঁথা তৈরির কলাকৌশল। এভাবেই চলে আসছে কাঁথাশিল্পের পরম্পরা। জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে,ভোরের আলো জমিনে পড়ার আগেই নাওয়া-খাওয়া সেরে বয়স্ক, গৃহবধূ ও তরুণীরা পুরনো কাপড় আর সূঁই-সুতা নিয়ে বসে পড়েছেন বাড়ির উঠোনে, ঘরের মেঝে এবং খোলাস্থানে। তাদের তৈরি কাঁথায় রঙ-বেরঙের নকশিকরা কাঁথাগুলো দক্ষ ও নিপুণ হাতের ছোঁয়া যা দৃষ্টিনন্দন নজরকাড়া। কম্বলের আধিপত্যে এই কাঁথা শিল্পে কিছুটা ভাটা পড়লেও পরম্পরার ঐতিহ্য আজো ধরে রেখেছেন অনেকেই।শুধু ব্যবহারের জন্য নয় এই শিল্পকে কাজে লাগিয়ে জীবিকা ও নির্বাহ করে চলছে অসংখ্য পরিবার তাই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সকলের এগিয়ে আসা উচিৎ বলে মনে করছেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ।