জাতীয় গ্রিডে যোগ হলো ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ
বিএনপি সরকারের সময় দেশে উৎপাদন হতো মাত্র এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ-- আর এখন হচ্ছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট আশা করি দেশের মানুষ এটা স্মরণে রাখবেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১০ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প ও চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেখা যায় বিদ্যুতের রিজার্ভের পরিমাণ ১৫/১৬০০ মেগাওয়াট মাত্র। তখন রাজধানীর অনেক এলাকাও ছিল অন্ধকারে। আমরা ক্ষমতায় এসে বেসরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্র করার সুযোগ করে দিয়েছি, যাতে রিজার্ভের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আমরা এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে যাত্রা করেছিলাম এখন ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে আশা করি দেশের মানুষ তা মনে রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ-- এজন্য তার সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছে শুধু শহরে নয়, গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্প উন্নয়নসহ যে কাজই করতে যাই তাতে বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। তাই আমাদের লক্ষ্য ছিল কত দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া। দুর্গম এলাকায়ও সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে এখন গ্রামে বসে কাজ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, মানুষের জীবন সহজ করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষমতায় এসে আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ঘরে ঘরে আলো জ্বালাবো, মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করবো। প্রতিটি অঞ্চল উন্নত করা এবং সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা। আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ।’
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, লুটপাট, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, ঘুষ, অত্যাচার, নির্যাতন ছিল বিএনপির কাজ। তাদের কাছে ক্ষমতা মানেই ভোগ বিলাসে গা ভাসানো। ক্ষমতায় থাকতে তারা দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান বানিয়েছিল। জঙ্গিবাদ ও বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন, আমার ওপর গ্রেনেড হামলাই ছিল তাদের কাজ। মানুষের উন্নয়নে তারা কোনও কাজ করেনি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহি চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সৌদি আরব ও কুয়েতের রাষ্ট্রদূত এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
যে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন হয়েছে সেগুলো হলো- শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, সাল্লা ৪০০ কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুৎ এবং সরিষাবাড়ী তিন মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
যে ১০টি এলাকা ইতোমধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনা হয়েছে সেগুলো হলো- ফরিদপুর সদর, মাদারীপুরের রাজৈর, নওগাঁ সদর, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, মাগুরার শালিখা, মেহেরপুর সদর, নেত্রকোণার মদন এবং নরসিংদীর বেলাবো।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোরে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি’ পার্কের উদ্বোধন করেন।
এরআগে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আইসিটি শিল্পের সুষম বিকাশ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। পার্কে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধাসহ ১৫তলা মাল্টি-টেন্যান্ট বিল্ডিং(এমটিবি); আন্তর্জাতিক থ্রি-স্টার মানের আবাসন ও জিমনেসিয়ামের সুবিধাসহ ১২ তলা ডরমিটরি বিল্ডিং, একটি ক্যান্টিন ও অ্যাম্ফিথিয়েটার, ৩৩ কেভিএ পাওয়ার সাব-স্টেশন; অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সংযোগ এবং অন্যান্য ইউটিলিটি সার্ভিস রয়েছে।
ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি ৪০টি কোম্পানিকে স্পেস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে— এ পার্কে প্রায় ৫হাজার লোকের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এই পার্কের উদ্বোধন প্রসঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, যশোরকে প্রযুক্তি-নগরী এবং ডিজিটাল ইকোনমিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টার সার্বিক তত্ত্বাবধানে যশোরে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই পার্কের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সম্ভাবনার নব দিগন্ত উন্মোচিত হলো।