নেতাকর্মীদের দৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান শেখ হাসিনার
আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের 'নিশ্চিত বিজয়' যেন কোন্দলের কারণে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য দলের নেতাকর্মীদের দৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাতে প্যারিসে ফ্রান্স শাখা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনায় দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, জনগণ আমাদের পক্ষে— ভোট দেবার জন্য প্রস্তুত ভোট দেবে, কেউ যেন এখানে কোনো ষড়যন্ত্র করতে না পারে। নিজেদের মধ্যে বিভক্তি থাকলে সেখান থেকে ষড়যন্ত্র ঢুকতে পারে।
দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রেই কিছু করতে পারবে না।
প্যারিসের গণসংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইলেকশন খুব কাছে— নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ইলেকশন। নির্বাচনের তিন মাস আগে থেকে প্রচার শুরু হয়ে যায়। হাতে আর আট-নয় মাস সময় আছে আমাদের উন্নয়নের কাজগুলো খুব দ্রুত করতে চাচ্ছি— উন্নয়নের ছোঁয়াটা সাধারণ মানুষের কাছে যেন পৌছায়।
অতীতে যারা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল তারা আবারও ক্ষমতাসীন হলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে—এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারীরা যেন আর ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে। এ ব্যাপারে প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে। তাদের এই মানুষ খুন করা থেকে শুরু করে লুটপাট, দুর্নীতির বিষয়ে মানুষকে সজাগ করতে হবে।
বিগত ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর রাজনৈতিক নিপীড়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তারা আসা মানেই দেশের মানুষের জন্য বিড়ম্বনা ঘটা, মানুষ খুন করা, আবার পুড়িয়ে মানুষ মারা।
নির্বাচনের আগে এই সময়ে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন দলীয় সভানেত্রী।
তিনি বলেন, যারা দলের জন্য এতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে পারে না তারা আবার নেতৃত্ব দেবে কী? সবাই বসে আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
একটা বিষয় লক্ষ্য রাখবেন, সেটা হল দেশের সম্মান। এই সম্মান যেন কারও আচরণে ক্ষুণ্ণ না হয়। এ বিষয়টার দিকে সকলেই অত্যন্ত সজাগ থাকবেন, নজর রাখবেন। এটুকুই আমার অনুরোধ থাকবে।
প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট না করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
যেহেতু আমাদের একেবারে প্রতিবেশী, তাদের সঙ্গে আমাদের সর্ম্পক নষ্ট হবে না। কিন্তু এই সমস্যাটা তাদের সৃষ্টি করা। এই সমস্যা তাদের বন্ধ করতে হবে এবং তাদের দেশের নাগরিকদের তাদের ফেরত নিতে হবে।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকের সমর্থন আমরা পেয়েছি। সকল রাষ্ট্র যেভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা সমর্থন পেয়েছি সারা বিশ্বের মানুষের। সব দেশের সরকারের না, কিন্তু সারা বিশ্বের মানুষের সমর্থন পেয়েছি আমরা। আর এই ঘটনায় (রোহিঙ্গা সঙ্কট) পৃথিবীর প্রায় সকল দেশই বাংলাদেশকে সমর্থন দিচ্ছে।
এর আগে বিকেলে 'ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে' নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সকালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে ম্যাক্রোঁ রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা বলেছেন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে বিকেলে প্যারিসের এলিজি প্যালেসে 'ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে' নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোকে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের তাগিদ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু সংকটে সুবিচার প্রতিষ্ঠাও ইতিহাসের দায় মেটাতে উন্নত দেশগুলো যেন তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করে। কেবল যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই পৃথিবীকে নিরাপদ করা সম্ভব।
প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
এ সময় রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বাড়তি চাপ।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলকে পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে ম্যাক্রো রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবেন বলে জানান।