জয়পুরহাটের কালাইয়ে ১৭০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার
জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ নিরেন দাস।
জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলাধীনে সরকারি ও বেসরকারি মোট ১৭০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই ১৭০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩৮ টি প্রতিষ্ঠানেই নেই বীর শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের মহান স্থান শহীদ মিনার।
একাধীক সূত্রে জানা যায়, উপজেলাধীরত সরকারি তহবিলের অভাব অন্য দিকে সংশ্লিষ্ট নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ব্যাপক অবহেলার কারণে ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিতে আজও নির্মাণ করা হয়নি বীর শহীদদের শরণী মহান শহীদ মিনার।
এতে করে উক্ত উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণির শত শত শিক্ষার্থী সহ সাধারণ জনগণ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস ও রক্তাক্ত ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সহ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস থেকে শুরু করে সকল দিবসের তৎপর্য ইতিহাস এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা নেওয়া থেকে একে বারেই বঞ্চিত হচ্ছে।
কালাই উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, কালাই পৌরসভা সহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, ইফতেদায়ি, ব্র্যাক এবং মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ মিলে মোট ১৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই সব ১৭০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নেই কোন শহীদ মিনার। শুধু মাত্র আছে মাত্র ৩২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি অথবা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ করার নির্দেশ থাকলেও তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
বরং ওই নির্দেশ কে উপেক্ষা করা হয়েছে বলেও জানা যায়। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস থেকে শুরু করে সকল দিবসের ততপর্য ইতিহাস এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা নেওয়া থেকে একে বারেই বঞ্চিত হচ্ছে কালাই উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণির শত শত শিক্ষার্থী।
তবে শহীদ মিনার নেই এমন কিছু সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এলাকার কিছু কিছু গ্রামে ১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারি এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস আসলে দেখা যায় উজ্জীবিত তরুণ-তরুণী এবং ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের উদ্যোগে এলাকার বিদ্যালয় মাঠ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় কলা গাছ পুঁতে বাঁশ, কাঠ ও বিভিন্ন রঙের কাগজ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে সেখানে পালন করে মহান বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও স্বাধীনতা দিবস।
সেই সঙ্গে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় ওই সব অস্থায়ী শহীদ মিনারে। এতে করে মহান বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এবং স্বাধীনতা দিবসের মান উজ্জল হওয়ার চাইতে ক্ষুণ্ন হওয়া ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। যদিও উপজেলার কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মহান বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়; কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ওই দিবসের কোনো গুরুত্বপূর্ণ দিক বা তাত্পর্য তুলে ধরা হয় না। এমনকি কোনো কর্মসূচিও পালন করা হয় না বলে অভিযোগ আছে।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আব্দুল মজিদ বলেন, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় মহান বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং স্বাধীনতা দিবস সহ সকল জাতীয় দিবসগুলো যথাযথ পালন না করায় প্রকৃত ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওই শত শত শিক্ষার্থী। এ জন্য আমি ওই সব এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
শহীদ মিনার স্থাপনের বিষয়ে কালাই উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা ইতিয়ারা পারভীন বলেন, এলাকার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যাতে করে আগামীতে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়।
১৩৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার কেন নেই এই বিষয়ে কালাই উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো. মনোয়ারুল হাসান বলেন, আজ পর্যন্ত ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার কেন তৈরি করা হয়নি এই বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয় টি নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিরা ভালো জানেন বলে তিনি জানান।