রাজশাহী-১ আসন: বিভক্তিতে ক্ষুদ্ধ তৃণমূল
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনটি গত দুই সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দখলে। এবার সেটি হাত ছাড়া হওয়ার আশঙ্কা। আর নেপথ্যে রয়েছেন একই দলের সাত নেতা। বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরোধীতায় নেমেছেন তারা। স্থানীয়ভাবে এই সাত নেতার জোটকে ‘সেভেন স্টার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এ নিয়ে স্পষ্ট ভাঙ্গনে রূপ নিয়েছে জেলার গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
দলীয় এমপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মাঠে নেমেছেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুণ্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বদরুজ্জামান রবু মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মকবুল হোসেন, প্রচার সম্পাদক ও গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবু, গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান এবং জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল ওহাব জেমস।
এই সাত নেতা যেকোনো মূল্যে এমপি ফারুক চৌধুরীকে নির্বাচনের মাঠে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, ফারুক চৌধুরী দলের ত্যাগী ও আদর্শবান নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে দিয়েছেন। তার কাছে এখন ভিড় করেছেন ‘বসন্তের কোকিলরা’। জামায়াত-বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আগতদের ভিড়ে হারিয়ে গেছেন এক সময় দলের জন্য জীবনবাজি রাখা নেতাকর্মীরা। এখন তারা মান, অভিমান আর ক্ষোভে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। সামনে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। এমপি ফারুক চৌধুরীকে এর চড়া মূল্য দিতে হবে।
এছাড়া সম্প্রতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টেকে কেন্দ্র করে এমপি ফারুক চৌধুরী ও গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবুর সমর্থকরা একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। সর্বশেষ ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মূলত কাঁকনহাটে এমপি বিরোধী সাত মনোনয়ন প্রত্যাশী একাট্টা হওয়ার পর থেকে উভয়পক্ষ মুখোমুখী অবস্থানে আছে। তবে এই সাত নেতার দাবি তাদের মধ্যে যে পাবেন নৌকা তারা তাদের পক্ষেই থাকবেন।
এদিকে এই সাত নেতার কর্মকাণ্ডে দলের অবস্থান খারাপ হচ্ছে বলে মনে করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান। তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। এর আগে দলের কিছু নেতার এমন অবস্থানের কারণে বিএনপি-জামায়াত সুবিধা পাবে। এখন থেকেই বিএনপি-জামায়াত সেই সুযোগ নিচ্ছে। দলের নেতা হিসেবে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন, কিন্তু দলের কর্মসূচির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটা ঠিক নয়। ক্ষমতাবান (এমপি) মানুষের ওপর অনেকেরই ক্ষোভ ও অভিমান থাকে। মানসিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য কিছু নেতাকর্মী এমপির বিরুদ্ধে বলছেন। এমপি বিরোধী নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, দলের ভেতরে যে ঐক্য ছিল, এই সাত নেতা তা ভাঙার চেষ্টা করছেন। দলের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নিচ্ছেন। দলের মনোনয়ন চাইতে হলে, দলীয় শৃংঙ্খলা মেনে কর্মসূচি পালন করা উচিত। কিন্তু ওই সাত নেতা ইচ্ছামতো দলের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিচ্ছেন। এতে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুদ্ধ। ফলে আগামীতে এর প্রভাব পড়বে বলেও মনে করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম বাবুর দাবি, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগের প্রথম দফার মেয়াদকালের শেষ পর্যায়ে শিল্প প্রতিমন্ত্রী হন ওমর ফারুক চৌধুরী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় দফা ফারুক চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি প্রবীণ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে নতুনদের গুরুত্ব দেন। এছাড়াও বিএনপি ও বিভিন্ন বাম সংগঠন থেকে আসা নেতাকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ পদও দেন তিনি। ফলে তারা ঐক্যবব্ধভাবে ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
আর এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, বড় দল হিসেবে অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশা করতে পারেন। কিন্তু তার একটা পদ্ধতি আছে। কেন্দ্র যাকে মনোনয়ন দেবে, তিনিই নির্বাচন করবেন। কিন্তু ওই সাত নেতা কর্মীদের বিভক্ত করছেন।