কালীগঞ্জে মাছের মেলা তথা জামাই মেলা
লোকমান হোসেন পনির, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) :
বাংলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বিনিরাইলের মাছের মেলা তথা জামাই মেলা। বিনিরাইলের মেলাকে স্থানীয়রা মাছের মেলা এবং জামাই মেলা বলে অভিহিত করে থাকেন। প্রতিবছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকে স্থানীয় জামাইসহ দূর-দূরান্তের মানুষগুলো। মাছের মেলা থেকে সবচেয়ে বেশি দামে কে কিনবে মাছ। সেই মাছ নিয়ে জামাই যাবেন তার শ^শুর বাড়ি। আকর্ষনীয় মাছ কিনতে চলে দর কষাকষি। ক্রেতা বেশি থাকায় বিক্রেতারা একটু দামে মাছ বিক্রি করতে পারে। তার সাথে আবার স্থানীয় জামাইদের চাহিদা রয়েছে সর্বোচ্চ দামে মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর, মোক্তারপুর ও জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের মধ্যে বিনিরাইল গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় বছরের এই দিনে পৌষসংক্রান্তি মাছের উৎসব উদযাপিত হয় ।
গতকাল রোববার সকাল থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ স্থানীয় ও বিভিন্ন জায়গা থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন প্রকার মাছ নিয়ে বিনিরাইলের মেলায় আসেন। ওই সব মাছ ব্যবসায়ীরা জানে এই দিনে এখানে মাছের মেলা বসে, তাই তো তারা দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। বিভিন্ন প্রকার বড় বড় মাছ মেলায় আনতে মাছ ব্যবসায়ীরা তা আগে সংগ্রহের চেষ্টা করেন।
স্থানীয় জনসাধারন ও আয়োজক কমিটির সূত্রে জানা যায়, যুগ যুগ ধরে মাঘ মাসের প্রথম দিনটিতে একই স্থানে মাছের মেলা হচ্ছে। স্থানীয় জামাইরা তাদের শ^শুর বাড়ি প্রতিনিয়ত আসলেও বছরের এই দিনের জন্য তারা অপেক্ষায় থাকেন। কারন শ^শুর বাড়ি যেতে হবে মাছ নিয়ে। নিজেকে পরিপাটি প্রমাণ দিতে জামাইরা আপ্রাণ চেষ্টা করে বড় ও আকর্ষনীয় মাছ কিনে এলাকায় ঘুরে ঘুরে সবায়কে দেখিয়ে শ^শুর বাড়ি যাবেন।
তাই তো স্থানীয় মেয়েরা তাদের স্বামীকে এই দিনের আগেই বায়না ধরেন বিনিরাইলের মেলা থেকে তার বাপের বাড়ি যেতে হবে বেশি দামের ও বড় মাছ নিয়ে। আর স্বামীরা স্ত্রী ও শ^শুর বাড়ির আত্মীয়স্বজনদের সম্মান ও ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মাছ কিনতে যান বিনিরাইলের মাছের মেলায়।
মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন শেখ জানান, বৃটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত।
মেলায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা থেকে আসা মাছ ব্যবসায়া নয়ন কুমার দাস জানান, তিনি ২০ বছর ধরে এই মেলায় দোকান করেন। শুরুতে বেচা-কেনা ভালো হলেও বর্তমানে তেমন হয়না। কারণ কোন্দলের জন্য বিনিরাইলের মেলাটি দু’ই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। বিনিরাইলের পাশেই চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসে তিন দিনব্যাপী মাছের মেলা। তবে ইতিহাস ঐতিহ্যের কারণে বিনিরাইলে কেনার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের ভীর এখন বেশী। তাছাড়া স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন হওয়াতে প্রতি বছর এ মেলায় যোগ দেন। এখানে বেচা-কেনাকে মূখ্য মনে করেন না বলে জানান তিনি।
বিনিরাইলের মাছের মেলা সংলগ্ন জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর গ্রামের জামাই নুরুল ইসলাম বলেন, শশুরবাড়ীতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা। তাই এলাকার সকল জামাইদের নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকেই। স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন। সেই অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকানো হয়।