জুড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা নিহত আহত -১৫
এ.কে.অলক মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় অনৈতিক কাজে বাধা দেয়ার জেরে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এতে উভয় পক্ষ ও পথচারীসহ অন্তত ১৫ আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের জামকান্দি গ্রামে ঘটেছে। সন্ধ্যায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যায় বিচারের আশ্বাসে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনাস্থল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যায় জামকান্দি গ্রামের জনৈক জমির মিয়া স্থানীয় বাসিন্দা সোনারূপা চা বাগানের শ্রমিক হরিলালের সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে যান। এ সময় হরিলাল বাড়িতে ছিলেন না। এক পর্যায়ে হরিলালের স্ত্রীর সাথে বাগান শ্রমিক স্বপনের ছেলে সঞ্জুকে অনৈতিক কাজে দেখতে পেয়ে বাঁধা দেন জমির। এতে সঞ্জু ক্ষিপ্ত হয়ে হাতে থাকা টর্চ লাইট দিয়ে জমিরের উপর হামলা করলে তার মাথা ফেটে যায়।
পরে স্থানীয়রা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। জমির সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় মঙ্গলবার সঞ্জু তার নিজের ঘর ভাঙ্গার দোষ দেন জমিরের উপর। এ ঘটনার জের ধরে জমিরের দুই আত্মীয় বুধবার সকালে সোনারতন নামক এক শ্রমিকের উপর হামলা করলে বাগানে পাগলা ঘণ্টি বাজিয়ে শ্রমিকরা দা, চিয়াড়ীসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে স্থানীয় জামকান্দি বস্তির বাসিন্দাদের উপর হামলা চালায়। এসময় তারা কয়েকটি গরু নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন বস্তির বাসিন্দারা।
এদিকে বস্তিবাসির উপর হামলার খবর মাইকে ঘোষণা দিলে বস্তির বাসিন্দারা জড়ো হতে থাকেন। খবর পেয়ে জুড়ী থানার পুলিশ এবং অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। শ্রমিকদের হামলায় মুক্তিযোদ্ধা ইয়াছিন মিয়া (৬৫), তার পুত্র শাহিন (৩৫), লিমন (১৮), হেলাল মিয়া (৪০), কাশেম মিয়া (৪০) ও আব্দুল আলী (৪০) আহত হন।
এছাড়া হামলায় শ্রমিকদের ছুড়া চিয়াড়ীর ভয়ে জামকান্দি-দক্ষিণভাগ সড়কের পথচারী ও যাত্রীরা প্রাণরক্ষার্থে দৌড়াদৌড়ির সময় আরো অন্তত ১৫ আহত হন।
আহতরা দক্ষিণভাগ, জুড়ী, কুলাউড়া ও সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ও ভর্তি করা হয়। গুরুত্বর আহতাবস্থায় ইয়াছিন আলী, শাহিন ও লিমনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল সাড়ে তিনটায় মুক্তিযোদ্ধা ইয়াছিন মিয়া মারা যান এবং শাহিনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) আবু ইউছুফ, জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলশানা আরা মিলি, ইউএনও অসীম চন্দ্র বণিক, ভাইস চেয়ারম্যানসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এলাকায় অবস্থান করে উভয়পক্ষকে শান্ত করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) আবু ইউছুফ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,আহত অবস্থায় বিকেল তিনটার দিকে মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন। আহত ছয় জনের নাম পাওয়া গেছে। উভয় পক্ষের সাথে আলোচনায় বসে আমরা ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।