কাপাসিয়ায় আওয়ামীলীগের দুর্গে হানা দিতে চায় বিএনপি
আসাদুল্লাহ মাসুম, কাপাসিয়া প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কাপাসিয়া আসনে আওয়ামীলীগ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিপরীতে বিএনপিতে গ্রুপিং থাকলেও তারা প্রকাশ্যে মাঠে এক । এ আসনটি আওয়ামীলীগের শক্তঘাটি হিসেবে পরিচিত হলেও আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দূর্গে হানা দিতে চায় বিএনপি।
এ আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলেই রয়েছে একাধিক প্রার্থী। ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন্ । তারা বিভিন্ন সভা সমাবেশ করছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের কথা জনগনের মাঝে তুলে ধরছেন।
এ আসনে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ কন্যা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি এমপি। মনোনয়ন চাইবেন বলে মাঠে রয়েছেন কেন্দীয় কৃষকলীগ সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, উপদেষ্ঠা শিল্পপতি আলম আহমেদ। কৃষকলীগ থেকে কে প্রার্থী হবেন জনমনে নানারকম জল্পনা আর কল্পনা রয়েছে।
বিএনপির মনোয়ন দৌড়েরয়েছেন প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আ স ম হান্নান শাহ্’র পুত্র শাহ্ রিয়াজুল হান্নান
প্রধান এ দুটি দলের পাশাপাশি সিপিবি, জাতীয় পাটি, জাসদ,গনতন্ত্রপার্টি সহ কয়েক জনের নাম শুনা গেলেও ভোটের মাঠে সিপিবি ছাড়া অন্য কোন পাটির নেতাকর্মীরা কেউ সক্রিয় ভাবে মাঠে নেই।
সিপিবি থেকে মনোয়ন দৌড়েরয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মানবেন্দ দেব।
আওয়ামীলীগের নেতারা মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মত বিনিময় এরপাশাপাশি সভা সমাবেশ করে এলাকায় এলাকায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রচারনা করছেন। অন্য দিকে বিএনপি এখনো মাঠে নামেনি। তবে এলাকায় এসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক করছেন।
এ আসনে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৮ হাজার ২৬৯ জন। ভোটকেন্দ্র ১১৭ টি ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের সহধর্মিণী জোহরা তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের ছোটভাই অ্যাডভোকেট আফছারউদ্দিন আহমদ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের পুত্র সোহেল তাজ হান্নান শাহর সঙ্গে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি থেকে এম এ মজিদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এবারও সোহেল তাজ বিজয়ী হন। তারপর সোহেল তাজ প্রথমে মন্ত্রিত্ব থেকে ও পরে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলে এ আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তার বড় বোন সিমিন হোসেন রিমি আপন চাচা অ্যাডভোকেট আফছারউদ্দিন আহমদের (স্বতন্ত্র প্রার্থী) সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সিমিন হোসেন রিমি আবারও নির্বাচিত হন।
বর্তমানে এ আসনে ব্যক্তি ইমেজে ভোটারদের মন জয় করেছেন তিনি । এ আসনে আওয়ামীলীগ অভ্যন্তরীন কোন্দল চরমে। বিশেষ করে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কৃষকলীগের সভাপতি মোতাহার হোনে মোল্লাকে মনোনয়ন দেয়াতে আওয়ামীলীগের একাংশ নির্বাচনে প্রকাশ্যে বিরোধীতা করে। এতে করে আওয়ামীলীগের আভ্যন্তরীন কোন্দল প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী বাছাই কালে আওয়ামীলীগের মধ্যে প্রার্থী বাছাই নিয়ে টানাপোড়ন চলে। কোন কোন ইউনিয়নে আলাদা ভাবে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। এ সব কর্মকান্ডের কারনে এ আসনের নেতাকর্মীরা দ’ুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি অংশ কাজ করছে বর্তমান সংসদ সদস্যের পক্ষে । অপর অংশ কাজ করছে বাংলাদেশ কৃষকলীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার পক্ষে । তারা দুটি গ্রুপই এলাকা চষে বেড়াচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফুল ঝুড়ি ছড়াচ্ছেন। সভা সমাবেশ সেমিনার করে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে জনগনের মাঝে পরিচয় করে নিচ্ছেন কেন্দ্রিয় কৃষকলীগের দুই নেতা।
এ আসনে বিএনপির প্রার্থীরা প্রকাশ্যে কোন নির্বাচনী প্রচারনা করছেন না। তবে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন শাহ রিয়াজুল হান্নান
দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এআসনে আওয়ামীলীগের দু প্রার্থীর মধ্যে দুজনই নিজেকে শতভাগ নিশ্চিত করে মনোনয়ন দাবী করছেন। তবে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ বর্তমান সংসদ সদস্যের বিপক্ষে অবস্থান রয়েছে।
আর বিএনপির মনোনয়নের ক্ষেত্রে শাহ রিয়াজুল হান্নান মনোনয়নের ক্ষেত্রে দৃঢ় মনোভাব পোষন করলে দলীয় মনোনয়ন তিনিই পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলের নেতা কর্মীরা জানিয়েছেন। দ্বিতীয় অবস্থান রয়েছে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জামার উদ্দিন আহমেদ । তবে দলীয় সভানেত্রী এ বিষয়ে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সময়পযোগী সিদ্ধান্ত নিবেন বলে কর্মীরা আশা পোষন করছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবী আগামী নির্বাচনে এ আসনটি উদ্ধার করতে আওয়ামীিেলগর দুর্গে হানা দিতে হলে একজন শক্তিশালী প্রার্থী দরকার।