নওগাঁর নিয়ামতপুরে ভারী কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহের ফলে বোরোর বীজতলা নষ্ট’ দুশ্চিন্তায় চাষীরা
মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, নওগাঁ প্রতিনিধি: চলমান শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে নিয়ামতপুরের অধিকাংশই বোরোর বীজতলা বিবর্ণ হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে হলুদ ও পরে চারা গাছগুলো লালচে হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা সময়মতো বোরো আবাদ করতে পারবে কি না তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দেখা দিয়েছে বোরো চাষীদের মাঝে। অবশ্য কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের আলো না পাওয়ায় চারা গাছগুলো ‘কোল্ড ইনজুরি’তে আক্রান্ত হয়ে হলুদ ও লালচে হয়ে যাচ্ছে। তবে নিয়ামতপুরের চাষীরা বীজতলা আগেই তৈরী করার ফলে এ চারাগাছ গুলো প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় এ চারা রোপনে বোরোর উৎপাদনে কোন প্রভাব পড়বেনা বলছেন তারা।
নিয়ামতপুর কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি বোরোর মৌসুমে উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় ২১ হাজার হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর কম। আর চাষের সেচ সুবিধার জন্য চালু রয়েছে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ৬০৪ টি গভীর নলকূপ। এছাড়াও সেচের সুবিধার জন্য রয়েছে সাবমার্সেবল পাম্প, পুকুর-দীঘি ও খাল-খাড়ীর পানি।
শনিবার উপজেলার নিয়ামতপুর, হাজিনগর, ভাবিচা, রসুলপুর, পাঁড়ইল ও শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মাঠে তৈরি অধিকাংশ বোরোর বীজতলার চারাগাছগুলো হলুদ ও লালচে রং ধারণ করছে। অনেক চারাগাছ শুকনো খড়ের মত হয়ে মরে যাবার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
রসুলপুর ইউনিয়নের বাদেচাকলা গ্রামের কৃষক জাজাল উদ্দীন, মিজান ও বাবর জানান, শৈত্য প্রবাহের আগ পর্যন্ত তাদের বীজতলার চারাগাছ ভালোই ছিল। কিন্তু শৈত্য প্রবাহের পর থেকে ধীরে ধীরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে সেসব বীজতলার অধিকাংশই চারাগাছ বিবর্ণ লাল হয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। এ চারা রোপনে ফলন বিপর্যয় ঘটবে মনে করছেন তারা।
শালবাড়ী গ্রামের কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদের জন্য ১০ কাঠা মাটিতে বোরো বীজতলা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু আমার বীজতলার সিংহভাগ চারাগাছই লালচে হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। বীজতলার যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে পাঁচ বিঘা জমিতেও এখন ধান লাগাতে পারব না। বীজতলা নষ্ট হওয়ায় চারা সংকটের কারণে বাকি জমিগুলোতে ধান আবাদ করতে পারব কিনা সেই আশঙ্কায় আছি।’
রসুলপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে এবং সূর্যের আলো কম থাকায় বীজতলার চারাগাছগুলো খাদ্য সরবরাহ না হওয়ার কারণে প্রথম হলুদ এবং পরে লালচে হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা কৃষকদের বীজতলাগুলো সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া এবং বীজতলায় প্রচুর পরিমাণে পানি জমে রাখার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া ছত্রাকনাশক থিয়োভিট পাউডার ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।’
নিয়ামতপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিকর্মকর্তা আমীর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘এখনও বীজতলায় তেমন ক্ষতির আশঙ্কা করছি না। আবাহাওয়া কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হয়ে গেল যেসব চারা হলুদ ও লালচে হয়ে গেছে সেগুলো আবারও ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু চলমান শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে বীজতলার চারাগাছ নষ্ট হয়ে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে আমাদের মাঠকর্মীরা কাজ করছে। তাঁরা কৃষকদের এ অবস্থায় কৃষকদের কী করণীয় সে সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছেন।