ভাষা আন্দোলনে টাঙ্গাইলের গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও ১৯৪৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার
অন্তু দাস হৃদয়, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :
একমাত্র মাতৃভাষার জন্য আত্মদান করেন বাঙালি জাতি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রচিত হয়ে ছিল ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল ভিত।
অমর ২১ শে ফেব্র“য়ারি শুধু আমার বা আমাদের বাঙালির অহঙ্কার নয়। এই ২১ শে ফেব্র“য়ারি পুরো বিশ্বের অধিকার আদায়ের পথ প্রদর্শকও এখন বাংলা ভাষা। যা ১৯৯৯ সালে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো।
মহান মুক্তিযুদ্ধে যেমন টাঙ্গাইলে বীরত্বগাথা ইতিহাস রয়েছে। তেমনি ৫২ -এর ভাষা আন্দোলনেও রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা।
টাঙ্গাইলে অনেক বীর সন্তান ভাষা আন্দোলনে জাতীয় ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মজলুম জন নেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামছুল হক অগ্রভাবে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ভাষা আন্দোলনে টাঙ্গাইলে গড়ে উঠেছিল দুর্বার আন্দোলন। এখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন বদিউজ্জামান খান, সৈয়দ আবদুল মতিন, সৈয়দ নুরুল হুদা, শামসুর রহমান খান শাজাহান, মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল. আবু সাঈদ খান, হাতেম আলী তালুকদার, রমিনুজ্জামান খান রইজ, নারায়ন চন্দ্র বিশ্বাস, ঋষিকেশ পোদ্দার, হাবিবুর রহমান, বুলবুল খান মাহবুব, নাজমি আরা রুবি প্রমুখ।
৫২ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি রাতে সরকারের হুলিয়া মাথায় নিয়ে তৎকালীন রমেশ হলের কাছে (বর্তমানে সাধারণ পাঠাগারের পশ্চিম পাশে) তারা টাঙ্গাইলে সর্ব প্রথম শহীদ মিনার স্থাপন করেন। বর্তমানে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি তৃতীয় সংস্করণের রূপ।
তবে, ভাষা আন্দোলনে টাঙ্গাইলের গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও এ জেলার ১৯৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। এতে দেশ প্রেম ও চেতনা প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন ভাষা সৈনিকেরা।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় সরকারি ও জাতীয় করণকৃত মোট ১৬২৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫১৬টি বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার।
এর মধ্যে টাঙ্গাইল ঘাটাইল উপজেলার ১৭৩টির মধ্যে মাত্র ৫ টিতে রয়েছে শহীদ মিনার, সখিপুর উপজেলার ১৫০টির মধ্যে ৬ টিতে, গোপালপুর উপজেলার ১৬১টির মধ্যে ৭ টিতে, বাসাইল উপজেলার ৭৯টির মধ্যে ৩ টিতে, টাঙ্গাইল সদরে ১৬৪টির মধ্যে ১৩টিতে, দেলদুয়ার উপজেলার ১০০টির মধ্যে ৫ টিতে, মির্জাপুর উপজেলার ১৬৯টির মধ্যে ৭ টিতে, কালিহাতী উপজেলার ১৭২টির মধ্যে ২৬ টিতে, মধুপুর উপজেলার ১১০টির মধ্যে ১০ টিতে, নাগরপুর উপজেলার ১৫৬টির মধ্যে ৭ টিতে, ভূঞাপুর উপজেলার ১১০টির মধ্যে ২ টিতে এবং ধনবাড়ীর উপজেলার ৮৫টির মধ্যে ২২ টিতে মোট ১১৩টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে।
এ দিকে, টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা অফিসের অধীনে ৮০৫টি হাইস্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে শহীদ মিনার নেই ৪৩০টি প্রতিষ্ঠানে ।
টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাযায়, টাঙ্গাইল সদরে ৭৪টির মধ্যে মাত্র ১০টিতে রয়েছে শহীদ মিনার, বাসাইলের ৪০টির মধ্যে ১৫টিতে, কালিহাতীর ৮৩টির মধ্যে ২৭টিতে, সখিপুরের ৫৫টির মধ্যে ৩১টিতে, ঘাটাইলের ৪৯টির মধ্যে ২৫টিতে, গোপালপুরের ৭০টির মধ্যে ৪০টিতে, মধুপুরের ৯২টির মধ্যে ৩৮টিতে, ধনবাড়ীর ৫৬টির মধ্যে ২৫টিতে, মির্জাপুরের ৭৯টির মধ্যে ৪৯টিতে, দেলদুয়ারের ১০৬টির মধ্যে ৫০টিতে, নাগরপুরের ৪১টির মধ্যে ২৭টিতে ও ভূঞাপুরের ৬০টির মধ্যে ৩৮টিতে মোট ৩৭৫টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জানান, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্যে সরকারিভাবে বরাদ্দ নেই। শিশুদের মনে মাতৃভাষার যথাযথ ইতিহাস তুলে ধরার জন্য শিক্ষাখাতের বরাদ্দ থেকে কিংবা বিত্তবানদের সহযোগিতায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ প্রয়োজন।
এ ছাড়াও ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি বুলবুল খান মাহবুব বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীজ রোপিত হয়েছিল ৫২-এর ভাষা আন্দোলনে।
২১ ফেব্র“য়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। যা সারা বিশ্বে এখন পালিত হয়। ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের বহু বছর চলে গেলেও টাঙ্গাইলের এতো গুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকা অত্যন্ত লজ্জার ও হতাশাজনক।
এতে, আমাদের দেশপ্রেম ও বাঙালির চেতনাবোধ প্রশ্নবিদ্ধ। আইন করে হলেও মাদরাসাসহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক করা উচিত।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আশরাফুল মমিন জানান, টাঙ্গাইল জেলায় এত গুলো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই এ সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের জানা ছিল না।
মাদরাসাসহ প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা উচিত। প্রতিষ্ঠান গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য আমরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুপ্রাণিত করবো। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিগোচর এবং আর্থিক সহযোগিতার জন্য মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করা হবে।