৩০ বছরের বাত-ব্যথার ইতিহাস খালেদার জামিন আবেদনে
গত ৩০ বছর ধরে তার গেঁটে বাত। ডায়াবেটিস ২০ বছর ধরে। ১০ বছর ধরে ভুগছেন উচ্চ রক্তচাপ আর আয়রণ স্বল্পতায়। আছে দুই হাঁটু প্রতিস্থানের কারণে হওয়া প্রচণ্ড যন্ত্রণাও।
বৃহস্পতিবার আদালতের কাছে এমন নানা শারীরিক জটিলতার কথা উল্লেখ করে জামিন আবেদন করেছেন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
আগামী রোববার দুপুর ২টায় এ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
একই সঙ্গে এ মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। এছাড়াও বিচারিক আদালতে খালেদাকে দেয়া জরিমানা স্থগিত করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ মামলর সমস্ত নথি হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
কারাবন্দী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর জামিন আবেদনে বলা হয়, আবেদনকারীর (খালেদা জিয়ার) বয়স ৭৩ বছর। তিনি শারীরিক বিভিন্ন জাটিলতায় ভুগছেন। তিনি ৩০ বছর ধরে গেঁটে বাত, ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিস, ১০ বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও আয়রণ স্বল্পতায় ভুগছেন।
১৯৯৭ সালে তার বাম হাঁটু এবং ২০০২ সালে ডান হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে আবেদনে আরো বলা হয়, হাঁটু প্রতিস্থাপনের কারণে তার গিটে ব্যথা হয়, যা প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক। এমনকি হাঁটাহাঁটি না করতেও চিকিৎসকের পরামর্শ রয়েছে। এসব শারীরিক জাটিলতার কারণ বিবেচনায় তার জামিন মঞ্জুরের সবিনয় আরজি জানাচ্ছি।
উপমহাদেশ এবং দেশের উচ্চ আদালতের দীর্ঘ ঐতিহ্যের কথা আবেদনে উল্লেখ করে বলা হয়, যখন আসামি একজন নারী হয়, তখন তার অনুকূলে জামিন বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আবেদনকারীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হোক। আর জামিন আবেদনকারী বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র চেয়ারপার্সন।
‘বিচারিক আদালত এই বিষয়টি উপেক্ষা করেছেন। তাছাড়া যে মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানীমূলক।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। আর তার ছেলে তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামীকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। সেই সাথে এদের সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লক্ষ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা জরিমানা করা হয়।
ওইদিন আদালত ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় উল্লেখ করে এর সারসংক্ষেপ পড়েন।
সোমবার খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে পর্যবেক্ষণসহ রায়ের যে অনুলিপি দেওয়া হয় তা ছিল ১ হাজার ১৭৪ পৃষ্ঠার।
পরের দিন মঙ্গলবার হাইকোর্টে সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল আবেদন উপস্থাপন করা হলে আদালত আপিল গ্রহণের বিষয়ে শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন।