টেস্ট খেলেন না দীর্ঘদিন, টি-টুয়েন্টিও ছেড়েছেন, ওয়ানডে আসে বিরতি দিয়ে দিয়ে; নিজেকে ফিট রাখাই তো চ্যালেঞ্জের! সেই চ্যালেঞ্জ উতরে মাঠের পারফরম্যান্সেও দুর্দান্ত প্রদর্শনী। বোলারটির চোটের ইতিহাস আর বয়সের সংখ্যাটা জানলে শুরুতে খানিকটা বিস্মিতই হতে হয়! কিন্তু পারফর্মারের নামটা যখন মাশরাফী, তখন ঘোরও কেটে যায় দ্রুতই। টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক সেই ঘোর কাটিয়ে আবার নতুন ঘোরে মোহাবিষ্ট করে চলেছেন বল হাতে ঝড় তুলে। মঙ্গলবার টানা চার বলে উইকেট নিয়ে করেছেন ডাবল হ্যাটট্রিকও।
লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি আবু হায়দার রনি। গত মৌসুমে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে নিয়েছিলেন ১৬ ম্যাচে ৩৫ উইকেট। এবার তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। আবাহনীর জার্সিতে খেলা এই পেসার চলতি মৌসুমে ৮ ম্যাচেই তুলে নিয়েছেন ২৫ উইকেট!
মাশরাফীর দল আবাহনী সুপার লিগ নিশ্চিত করে ফেলায় ম্যাচ পাওয়া যাবে আরও আটটি। ওই আট ম্যাচে ১১ উইকেট নিলেই নতুন রেকর্ডে নাম লেখাবেন তিনি।
যেভাবে উইকেট পাচ্ছেন তাতে আবু হায়দারকে টপকে যেতে হয়ত লিগের শেষপর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না মাশরাফীকে। নামের পাশে কত উইকেট নিয়ে লিগ শেষ করেন, সেটি দেখার জন্যই এখন যত কৌতূহল। এদিন ‘ডাবল হ্যাটট্রিক’সহ ৬ উইকেট তুলে নিয়ে কৌতূহলটা আরও বাড়িয়েছেন। ফতুল্লায় অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট নিয়েছিলেন। শেষ ওভারে টানা চার বলে ৪ উইকেট তুলে বিস্ময়ই জাগালেন অল্পগতিতে বল করে চলা এই পেসার।
সোমবার মিরপুরের একাডেমি মাঠে অনুশীলন সেরে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা জমান মাশরাফী। সেখানে কথা হয় প্রিমিয়ার লিগ নিয়েও। ৭ ম্যাচে ১৯ উইকেট তখন নামের পাশে। এভাবে মুড়ি-মুড়কির মতো উইকেট আর কবে পেয়েছেন মনে আছে? মাশরাফীর উত্তর, ‘সত্যি কথা বলতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছাড়া উইকেট মনে রাখা হয় না সেভাবে। জাতীয় দলের খেলা থাকে, পুরো লিগ তো খেলাও হয় না। তবে প্রিমিয়ার লিগ খুব উপভোগ করি, এটা সত্যি।’
এবার অবশ্য পুরো লিগ খেলা হবে ওয়ানডে অধিনায়কের। মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স লিগের মাঝপথেই করে ফেলেছেন। বাকিটা রাঙিয়ে ৩৪ বছর বয়সে এসে নতুনভাবে নিজেকে চেনানোর পালা!
প্রিমিয়ার লিগের শুরুতেই মাশরাফীর বোলিংয়ের ধার দেখে আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে ফেরানোর চেষ্টা করেছিল বিসিবি। না ফেরায় আফসোস বেড়েই চলেছে বোর্ড কর্তাদের। এমন বোলার থাকতেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না দলে! ফেরানো গেলে এখন থাকতেন শ্রীলঙ্কায় জাতীয় দলের সঙ্গে। জাতীয় দলের সঙ্গে না থেকেও সব আলো কেড়ে নিচ্ছেন। মাশরাফীর জয় তো এখানেই!
শুধু মাশরাফী কেন, এবারের লিগে দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন অন্য পেসাররাও। মরা উইকেটে গতির ঝড় তুলতে না পারলেও মাথা খাটিয়ে বল করে উইকেট তুলছেন অভিজ্ঞ ও তরুণরা। লিগে এখন পর্যন্ত সেরা পাঁচ বোলারের চারজনই পেসার।
মাশরাফীর পরই আছেন কাজী অনিক। মোহামেডানের হয়ে খেলা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এ বাঁহাতি পেসার ৮ ম্যাচে নিয়েছেন ২০ উইকেট। মঙ্গলবার মিরপুরে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে নেন ৪ উইকেট। সাত ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে তৃতীয় স্থানে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার মোশাররফ হোসেন রুবেল।
আর ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের অভিজ্ঞ পেসার ফরহাদ রেজা চতুর্থ অবস্থানে। পঞ্চম স্থানে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের পেসার দেলোয়ার হোসেন। আট ম্যাচে নিয়েছেন ১৬ উইকেট।