কক্সবাজারের ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কে ৫ জনের সিন্ডিকেটে অপহরণ বাণিজ্য!
সেলিম উদ্দিন, কক্সবাজার প্রতিনিধি :
কক্সবাজারের ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কে ৫ জনের সিন্ডিকেটে চলে অপহরন বাণিজ্য। তারা হলেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী উমিচং ব্রিক ফিল্ড এলাকার মোঃ আনোয়ার প্রকাশ আনাইয়া। উত্তর বাইশারীর উমিচং পাহাড় এলাকার ছৈয়দ হোসেনের পুত্র আবদুস সালাম, সদরের ইসলামাবাদ গজালিয়ার গুরা মিয়ার পুত্র মোঃ সেলিম, মোজাহের আহমদের পুত্র শফি আলম ও ঈদগড়ের পুতিয়া। দীর্ঘদিন ধরে তাদের নেতৃত্বে চলে আসছে ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়কে অপহরণ, ডাকাতি ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা। সম্প্রতি ইসলামাবাদ পূর্ব গজালিয়ার ছৈয়দ আলম প্রকাশ বাদুল্লা নামের এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে ৪দিন পর ৬৮ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয়। ঘটনাটি সর্বত্রে ছড়িয়ে পড়লে নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। গোপন সংবাদ ও তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় এ ঘটনায় জড়িত গজালিয়ার গুরা মিয়ার পুত্র মোঃ সেলিমকে শ^শুর বাড়ি ঈদগড় লম্বাবিলের ফরিদুল আলমের বাড়ি থেকে গত ৮ মার্চ বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আবু মুসার নেতৃত্বে একদল পুলিশ আটক করে। ঐদিন প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে উল্লেখিত আরো ৪ জনের নাম উঠে আসে। সে থেকে বাইশারী-ঈদগড়-ঈদগাঁও পুলিশ তাদের ধরতে মরিয়া হয়ে উঠে। অভিযানের প্রেক্ষিতে গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আবদু ছালামকে তার নিজ বাড়ী থেকে আটক করে পুলিশ। এদিন তাকে নিয়ে পাহাড় ও তাদের আস্তানায় রূদ্ধশ^াস অভিযান চালায় বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আবু মুসার নেতৃত্বে একদল পুলিশ। তবে এসময় কোন অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেননি অভিযানকারীরা। পুনরায় তাকে তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে প্রাথমিক স্বীকারোক্তি নেয়া হয়।
এসময় আটককৃত আবদু সালাম জানায়, তাদের সিন্ডিকেটের প্রধান তার দুঃসম্পর্কীয় জামাই আনোয়ার হোসেন প্রকাশ আনাইয়া তাকে ফূসলিয়ে ১৫ দিন পূর্বে তার দলে নেয়। এরপর থেকে ২টি অপহরণ ও একটি ডাকাতিতে সরাসরি জড়িত ছিল এরা ৫ জন। এসময় ব্যবহার করে আসছিল ২টি লম্বা বন্ধুক, ৩টি মুখোশ ও কয়েকটি গামছা। এসময় আবদু সালাম স্বীকার করে, বৃদ্ধ ছৈয়দ আলমের পরিবার থেকে নেয়া ৬৮ হাজার টাকার মধ্যে তার ভাগে পড়েছিল ৫ হাজার টাকা। ২টি অস্ত্র ভাড়া বাবদ ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত নিয়েছিল আনাইয়া। এর আগে সন্ধ্যায় লেদু ও চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর অপর এক যুবককে অপহরণের পর পালিয়ে আসায় তাদের মেজাজ খারাপ ছিল। এসময় আনাইয়া, শফি, সেলিম ৩জনই সারারাত ইয়াবা সেবন করছিল বলে জানায় সে। এর ১৫ দিন পূর্বে এক মোটর সাইকেল চালককে থামিয়ে ৩০ হাজার টাকা ডাকাতিও করেছিল এরা ৫জন। এসময় তাদের কয়েকটি অস্ত্র রাখার আস্তানাও অপহরণকৃত ব্যক্তিদের রাখার কয়েকটি স্পটও পুলিশকে দেখিয়ে দেয় আবদু ছালাম। অপহৃত বৃদ্ধ বাদুল্লাকে রাখা হয়েছিল গহীন জঙ্গলের একটি কূপে। পুলিশের অভিযান দেখে স্থানও পরিবর্তন করে কয়েকটি। সম্প্রতি এ সিন্ডিকেটের ২জন সদস্য আটক হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তির নিঃশ^াস ফিরে এসেছে। তবে স্থানীয়দের দাবী, সিন্ডিকেটের প্রধান আনোয়ারকে আটক করলে আরো বহুল তথ্য বেরিয়ে আসবে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে আনাইয়ার নেতৃত্বে এ সিন্ডিকেটটি ঈদগাঁওয়ের হিমছড়ি, সাততাঁরা, ঈদগড় ঢালা, পানের ছড়া ঢালা, বাইশারীর বেংডেবা এলাকা থেকে সাধারন মানুষকে অপহরন, ডাকাতি, মুক্তিপন আদায় করে আসছিল। অভিযোগ আছে সিন্ডিকেট প্রধান আনোয়ার এতই সাহসী কাউকে পরোয়া করে না। ইতিমধ্যে সে বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আবু মুছা, চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভুট্রো, মোঃ আলমসহ সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তিদেরকে মুঠোফোনে হুমকি দিয়ে আসছে। তার কাছে অসহায় ঈদগড়-বাইশারীর অর্ধলক্ষাধিক জনগণ।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আবু মুসার সাথে এসময় তিনি সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে ঈদগড়-বাইশারীর দীর্ঘদিনের সমস্যা অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের বিশাল নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দেয়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। ইতোমধ্যে সিন্ডিকেট প্রধান আনোয়ারকে ধরতে পুলিশের বেশ কয়েকটি টীম তার আস্তানাও সম্ভাব্য স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তিনি আরো বলেন, বাইশারী-ঈদগড় সড়কের অভ্যন্তরে অপহরণ ও ডাকাতি প্রতিরোধে বিশেষ অভিযান চালিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে অপহরণচক্রের ২ সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। তার মধ্যে একজন সেলিম ও আবদু সালাম। তারা দু’জনই শীর্ষ ডাকাত আনোয়ার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। তারা অপহরণ ও ডাকাতির দায় স্বীকার করেছে।